বারমুডার আকাশে গুম হওয়া প্রসিদ্ধ কয়েকটি প্লেন
বারমুডার আকাশে গুম হওয়া প্রসিদ্ধ কয়েকটি প্লেন
বারমুডার আকাশে গুম হওয়া প্রসিদ্ধ কয়েকটি প্লেন (১) ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর মার্কিন পাঁচটি জঙ্গি বিমান গায়েব হয়। অতপর এর তালাশ করতে যেয়ে পূনরায় আরেকটি প্লেন গায়েব হয়।
(২) ১৯৪৭ সালের ৩ জুলাই আমেরিকার আকাশপথ গবেষণাকারী C54 বারমুডার আকাশে স্থায়ীভাবে গুম হয়।
| (৩) ১৯৪৮ সালের ২৯ জানুয়ারী চার ইঞ্জিনবাহী "ষ্টারটাইগার" নামক প্লেন ৩১ জন আরােহী সহ গায়েব হয়। আজ পর্যন্ত কোন হদিস মেলেনি।
(৪) ১৯৪৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর DC3 নামক প্লেন ২৭ জন যাত্রীসহ বারমুডায় গায়েব হল ??!! নাকি পানির নিচে গুম করা হল ?! কোন পাত্তা নেই।
(৫) ১৯৫৯ সালের ১৭ জানুয়ারী "ষ্টার এরিল" নামক প্লেন বারমুডার শিকারে পরিণত হয়।
(৬) ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে "গ্লোবমাষ্টার" নামক মার্কিন বিমান আরােহীদের নিয়ে ওই এলাকা দিয়ে অতিক্রম করে। পরে আর গন্তেব্যে ফিরে আসেনি।
(৭) ১৯৫২ সালের ২ ফেব্রুয়ারী "ইয়াের্কট্রান্সপাের্ট" নামক ব্রিটিশ বিমান গায়েব হয়। (৮) ১৯৫৪ সালের ৩০ অক্টোবর মার্কিন সামুদ্রিক বিমান চিরদিনের মত লাপাত্তা। (৯) ১৯৫৬ সালের ৫ এপ্রিল মার্কিন মালবাহী প্লেন ষ্টাফসহ গায়েব। (১০) ১৯৬২ সালের ৮ আগষ্ট মার্কিন আকাশপথ পর্যবেক্ষনকারী K.B নামক বিমান গায়েব। (১১) ১৯৬৩ সালের ২৮ আগষ্ট মার্কিন আকাশপথের C.B.5 নামক দুটি প্লেন গায়েব হয়। (১২) ১৯৬৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর C132 নামক প্লেন গায়েব। (১৩) ১৯৬৫ সালের ৫ জুন C119 নামক প্লেন দশ যাত্রীসহ গায়েব। (১৪) ১৯৬৭ সালের ১১ জানুয়ারী YC122 নামক প্লেন ১৪ জন আরােহী নিয়ে গায়েব। (১৫) ১৯৪৭ সালের ১৭ জানুয়ারী মার্কিন জঙ্গি বিমান গুম।
এগুলাে হচ্ছে বারমুডার আকাশে প্রসিদ্ধ সব বিমান গায়েব হওয়ার ঘটনা। এছাড়াও আরাে অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলাে কালের বিবর্তনে রূপকথার কাহিনীতে রূপান্তিরত হয়েছে।
বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল এবং শয়তানী সমুদ্রের মধ্যে সম্পর্ক
এতদুভয়ের মাঝে সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকদের দাবী- গায়েবকৃত প্লেন এবং জাহাজ এক ট্রাইএঙ্গেল থেকে অন্য ট্রাইএঙ্গেলের দিকে যেতে দেখা গেছে এমন বহু প্রমাণ বিদ্যামন। উভয় ট্রাইএঙ্গেলই একই আয়তন এবং এরিয়া নিয়ে গঠিত। যে রকম ঘটনা বারমুডার পানি এবং আকাশে ঘটতে দেখা গেছে, একই প্রকৃতির ঘটনা শয়তানী সমুদ্রেও (ফ্লাইং সােসার্সের আসা-যাওয়া, উপরে রাউন্ড দেয়া এবং পানির ভিতরে প্রবেশ করা আবার পানি থেকে উপরে উঠে আসার মত আশ্চর্য বিষয়) বহুবার সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানেও যাত্রীবিহীন বহু জাহাজ দ্রুতগতিতে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। বারমুডার মত এখানকার পানিতেও গরম ও শক্তিশালী ঢেওয়ের সৃষ্টি হয়। যার ফলে এতে বিশাল পর্যায়ের আকর্ষণশক্তির উদ্রেক হয়।
বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল এবং কতিপয় মন্তব্য...
বারমুডায় গায়েব হওয়া সামুদ্রিক জাহাজ, নৌযান এবং বিমানসমূহের সম্পর্ক অধিকাংশই আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সাথে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়- এ দু'দেশের সরকার কোন সময় না বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, আর না ঐ এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে জাহাজ বা প্লেনগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করেছে। বরং এ ব্যাপারে যতগুলি গবেষণা টিম গঠন করা হয়েছে একটিরও রিপাের্ট প্রকাশ করা হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়- পৃথিবীর কোন সরকারেরই এরকম কোন পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা নেই। একারণেই বহু সরকারী গবেষক প্রকাশ্যে জনসমক্ষে অস্বীকার করে বসে যে, এরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটার মত এলাকার অস্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে নেই।
বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলে দুর্ঘটনার কারণ বিবরণে বহু কিছু লেখা হয়েছে। সুপ্রসিদ্ধ বিশ্ববিজ্ঞানী, দক্ষ ভুমিবিশেষজ্ঞ (Geologists), প্রকৃতিবিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাতারবিশেষজ্ঞ এবং বুদ্ধিজীবি এমনকি ইহুদীখ্রিষ্টানদের ধর্মীয় প্রবক্তারাও পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্যের বিবরণ দিয়েছে। প্রত্যেকের মন্তব্যেই নিজস্ব ধর্মকর্মের (Point of view)ছাপ স্পষ্ট প্ররিলক্ষিত হয়েছে। এখানে আমরা প্রসিদ্ধ কয়েকটি মন্তব্য উল্লেখ করে তা নিয়ে আলােচনা করব।
| যে সকল শক্তি বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল থেকে লােকদের মনযােগ সরাতে চায়, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় : "প্লেন এবং জাহাজকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সময়ে সময়ে বহু ঘটনাই ঘটে আসছে। সুতরাং বারমুডার ওখানেও যদি এরূপ কোন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে আশ্চর্য হওয়ার কোন কিছু নেই।" এরকমই একটি মন্তব্য (The Bermuda Triangle Mystery Solved)নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে (লেখক-লেরি কোশে) উল্লেখ করা হয়েছে :
The accidents were not strange but only hyped up by the media and irrational sensationalist.
অর্থাৎ বারমুডায় সংগঠিত দুর্ঘটনাগুলি এত আশ্চর্য ও বিরলপ্রকৃতির ছিলনা; বরং মিডিয়া ও অযৌক্তিক কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এটাকে বড় করা হয়েছে।
উল্লেখিত মন্তব্য ছাড়াও যে সকল গবেষক বারমুডার বাস্তবতা মেনে নিয়ে বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন, তা নিম্নরূপ:
(১) প্রাচীন যুগপ্রিয় খৃষ্টানদের ধারনা- বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল হচ্ছে জাহান্নামের দরজা।
(২) কিছু ব্যক্তি এ কথা বলে বারমুডার গুরুত্ব হ্রাস করার চেষ্টা করে যে, ওখানকার পানির গভীরতা খুব বেশি। সুতরাং জাহাজ বা প্লেন গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা কোন আশ্চর্যের বিষয় না।
(৩) একদলের মন্তব্য- বারমুডার পানির অভ্যন্তরে শক্ত তুফান ও প্রবল পানি সঞ্চালনের সৃষ্টি হয়। ফলে তা জাহাজ ও প্লেনকে অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।
(৪) বারমুডার পানিতে জলকম্পন সৃষ্টি হয়, ফলে দ্রুতগতিতে অনেক দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।
(৫) কতিপয় গবেষকদের মন্তব্য- ওখানে (Electric Magnetic Waves) বৈদ্যুতিক শক তৈরী হয়, যার ক্ষমতা আমাদের ব্যবহৃত বিদ্যুত থেকে হাজার গুন বেশি। অসম্ভব ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের গতি জাহাজকে তার নাম-নিশানা পর্যন্ত মিটিয়ে দেয়, আর উড়ন্ত প্লেনকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। একারণেই কম্পাস (দিক নির্ধারণকারী প্রযুক্তি) ওই স্থানে অকেজু হয়ে যায়। একটি হচ্ছে- বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে শয়তানী সমুদ্র।
কম্পাস অকেজু হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে- ওই দুই এলাকা ছাড়া দুনিয়ার কোথাও কোম্পাস ব্যবহার করেন, তার সুঁই উত্তর দিকে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা উত্তর দিকে নয়; বরং মেগনেটিক উত্তর দিকে হয়। কেননা ওই দুই এলাকায় কম্পাসের সুঁই উত্তর দিকে হয়। যারফলে ওখানে দিক নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। এটিই মার্কিন সমুদ্রিক গবেষণা টিমের মন্তব্য:
The US Navy proposed the possibility of electromagnetic and atmospheric disturbances.
(৬) অধিকাংশ সাইন্সবীদদের মতে- এটি একটি সম্পূর্ণ সাইন্সি বিষয় :
Most scientist attribute the disapparances to tricky ocean currents, hostile weather and human or technical error. In the area, compasses point to the geographical North Pole rather then the magnetic north, which somthing makes navigation difficult causing accidents.
অর্থাৎ- অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা গুম হওয়ার ঘটনাগুলিকে উত্তাল সমুদ্রের তরঙ্গ, অনুপযােগী ঋতু এবং টেকনিক্যাল ত্রুটি মনে করে। বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের এরিয়ায় ভৌগােলিক অবস্থানে কম্পাস উত্তর দিকে হয়। মেগনেটিক উত্তর দিকে নয়। যদ্দরুন ওখানে দিক নির্ধারণ সমস্যা হয়ে পড়ে এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাড়ায়।
(৭) এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী (Ed snedeker)এড স্নেডেকারের মন্তব্য :
The atmosphere above the triangle is filld with invisible tunnels, which suck in the aircraft, ships and people.
"ট্রাইএঙ্গেলের উপরের আকাশে অদৃশ্য বহু শক্তিশালী বিষয় রয়েছে; যা প্লেন এবং জাহাজকে যাত্রীসহ পানির অতল গহবরে নিয়ে ছাড়ে।"
| (৮) বারমুডার ব্যাপারে গবেষণাকারীদের অন্যতম চার্লস ব্রিটলজের ধারণা- ওখানকার পানির অভ্যন্তরে মেগনেটিক ভােরটেক্স বিদ্যমান। তাই শিকারকে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়।
(৯) আরেক মতামত- বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের ভেতরে ফ্লাইং সােসার্স আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। ফ্লাইং সােসার্কে আরােহনকারী গােপন শক্তিরই ঠিকানা ওই এলাকা; যারা নিজেদের বিশেষ টার্গেট বাস্তবায়নকল্পে শক্তিশালী জাহাজ, প্লেন ও বিশেষ মানুষদের গুম করে থাকে।
(১০) আমেরিকার কিছু লােক এটাকে আত্মিক বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে। (১১) বাস্তব কথা যে, ওখানকার পানির গভিরে ছােট ছােট গর্ত দেখা গেছে।
(১২) এই এলাকাতেই প্রাচীন সভ্যতার সমাধি হয়; যা সংস্কৃতির উন্নত শিখড়ে পৌছেছিল এবং পানিতে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে এগুলাে ধ্বংস হয়েছিল।
বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের বাস্তবতার ব্যাপারে উল্লিখিত মন্তব্যসমূহ ছাড়াও আরাে অনেক মন্তব্য পাওয়া যায়। যেমন- "মেথিন গেস" থিউরি নামে একটি মন্তব্য প্রসিদ্ধ; যা ডক্টর বেন ক্লিনাল উল্লেখ করেছেন:
Dr. Ben Clennel of Leeds University popularized the theory that methane locked below the sea sediments reduces the density of water making ships sink. He also claimed thet the highly combustible gas could also ignite aircraft engines, bellowing them up.
"লেডিস ইউনিভার্সিটির ডক্টর বেন ক্লিনাল মতামত প্রকাশ করেছেন যে, বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের ভেতরে। সমুদ্রে নিচের "মেথিন গেস" রয়েছে; যা সমুদ্রের গভীরে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। এগুলি সমুদ্রের গভীর থেকে বড় বড় মনিমুক্তার আকৃতিতে পানির উপরিভাগে চলে আসে। আর এ মনিমুক্তাগুলি স্পর্শ বা কোন আওয়াজের মাধ্যমে ফেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে তার গেস বের হয়ে পড়ে। ফলে ওখানকার পানির ঘনত্ব কমে যায়। যদ্দরুন জাহাজ-বুট ইত্যাদি ডুবে যায়।" তিনি আরাে বলেন- "যেহেতু গেসগুলি অত্যাধিক দ্রুতগতির জ্বালানী শক্তিসম্পন্ন, তাই যদি তা আকাশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে আকাশে উড়ন্ত প্লেনকেও মুহুর্তের মধ্যে এক ধামাকায় উড়িয়ে দিতে পারে।
(১৩) মিসরের প্রখ্যাত মুসলিম গবেষক মুহাম্মদ ঈসা দাউদের মতে- শয়তানী সমুদ্র আর বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল হচ্ছে "কানা দাজ্জালের" মালিকানা। সে ওখানে যথারীতি ট্রাইএঙ্গেলের আকৃতিতে স্বীয় আস্তানা নির্মাণ করেছে।





No comments
Post a Comment