ads

খরগোশ ও কাছিম এবং আধুনিক যুগ।

খরগোশ ও কাছিম এবং আধুনিক যুগ।



কাছিম তার ধীরে ধীরে হাটা চলা নিয়ে খরগােসের অট্টা সহ্য করতে না পেরে একদিন খরগােসকে দৌড় প্রতিযােগিতায় ডেকে বসল। যথা সময়ে দৌড় শুরু হয়েছে, খরগােস চোখের পলকে কাছিমকে পিছনে ফেলে বহুদূর এড়িয়ে গেল। মাঝামাঝি পৌঁছে খরগােস দেখল তার হাতে অনেক সময়, সময় কাটানাের জন্যে সে তখন কিছু ঘাস লতা পাতা খেয়ে ঠিক করল গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নেবে। বসে থাকতে থাকতে তার চোখে হঠাৎ ঘুম নেমে এল। এদিকে কাছিম ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে খরগােসকে পার হয়ে একেবারে শেষ মাথায় পৌছে গেছে। সে তখন প্রাণপনে দৌড়াতে শুরু করল, কিন্তু কোন লাভ হল না। কাছিম তার আগেই শেষ মাথায় পৌঁছে গেছে। সুবচন : সুস্থির ও ধীর গতিরই জয় হয়। আধুনিক রূপ: নিউমার্কেটে এক বইয়ের দোকানে খরগােস আর কাছিমের দেখা। খরগােস মুখ বাঁকা করে হেসে বলল, কিরে ব্যাটা কাছিম, তাের হাঁটা দেখে হেসে মরি। এক পা যেতে দেখি আধ ঘণ্টা লেগে যায়! • | কাছিম গম্ভীর হয়ে বলল, যার যে রকম দস্তুর। কিন্তু তাতে ক্ষতিটা কি হয়েছে? আজকাল তাে আর আগের মত পায়ে হেঁটে যেতে হয় না। রিক্সা আছে, স্কুটার আছে, বাস আছে যেখানে যাবার কথা সেখানে সময় মত পৌছালেই হল। খরগােস তার চোখ লাল করে বলল, যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! তুই বলতে চাস কোথাও যেতে হলে তুই সেখানে আমার আগে পৌছে যাবি? কাছিম উদাস মুখে বলল, যেতেও তাে পারি! খরগােস বলল, ঘােড়ার ডিম যাবি। কাছিম বলল, ঠিক আছে তাহলে দেখা যাক কে আগে গুলিস্তান পৌছাতে পারে! কত টাকা বাজী? একশ টাকা। তাই সই। সাথে সাথে খরগােস আর কাছিম ছুটতে শুরু করল। খরগােস দৌড়ে গিয়ে একটা স্কুটার থামিয়ে বলল, চল গুলিস্তান! স্কুটারওয়ালা বলল, তিরিশ টাকা লাগবে কিন্তু আগেই বলে রাখলাম! লাগলে লাগবে, এখন আর দেরী কর না। খরগােস লাফিয়ে স্কুটারের ওপর উঠল, স্কুটার কাছিমের মুখে কালাে ধোঁয়া ছেড়ে সাথে সাথে গুলির মত বের হয়ে গেল। কাছিম তার মানি ব্যাগটা বের করে দেখল টেনে টুনে কোন রকমে রিক্সা ভাড়াটা হয়। সে একটা রিক্সায় সাথে দরদাম করে ভাড়া ঠিক করে রওনা দিল। রিক্সাওয়ালা বুড়াে মানুষ দুপুরের রােদে ঘামতে ঘামতে রিক্সা টেনে নিয়ে চলল। এদিকে স্কুটার ছুটে চলছে গুলির মত, খরগােস চিৎকার করে বলল, আরাে জোরে চল। আরাে জোরে স্কুটারওয়ালা দাঁত বের করে হেসে বলল, এই দেখেন স্যার কত জোরে যাই! সে তার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ঝড়ের মত ছুটে চলল, রিক্সা টেম্পােকে পিছনে ফেলে, গাড়ী মাইক্রোবাসকে পাশ কাটিয়ে ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে সে ছুটে চলল। খরগােস চিৎকার করে বলল, আরাে জোরে চল, ব্যাটা কাছিমকে একটা জন্মের মত শিক্ষা দিয়ে যাই | স্কুটারওয়ালা উৎসাহে মাথা নেড়ে বলল, আপনি স্যার খাটি প্যাসেঞ্জার সবাই শুধু বলে আস্তে চালাও! আস্তে চালাও! স্কুটার কি আস্তে চালিয়ে কোন মজা আছে? খরগােস ধমক দিয়ে বলল, কথা বল না এখন, তাড়াতাড়ি চল। স্কুটায় তখন এত জোরে ছুটে চলল যে প্রায় চোখে দেখা যায় না। কোন কিছু যখন বেশী জোরে যায় তখন সেটা ঘােরানাে যায় না। স্কুটারওয়ালা দোয়েল চত্বরের কাছে এসে সেটা আবিষ্কার করল, সে যতই চেষ্টা করতে থাকে স্কুটার কিছুতেই ঘুরে না। সে প্রাণপনে হ্যান্ডেল ঘােরানাের চেষ্টা করতেই একটা বিচিত্র ব্যাপার ঘটল, স্কুটারের একটা চাকা হঠাৎ শূন্যে উঠে গেল এবং স্কুটারটা দুই চাকায় ছুটতে ছুটতে প্রথমে দোয়েল চত্বরে ধাক্কা লেগে প্রায় উড়ে এসে কার্জন হলের গেটে আছড়ে পড়ল সেখানে স্কুটারটা উল্টে গিয়ে উল্টো অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে সেটা সামনে এগিয়ে যায়। ইউনিভার্সিটির ছেলেরা তখন স্কুটারওয়ালাকে আর খরগােসকে আধমরা অবস্থায় টেনে বের করে। যখন ছেলেরা আগে স্কুটারওয়ালাকে ধরে মার লাগাবে না আগে হাসপাতালে নিয়ে যাবে সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করছিল তখন কাছিমের রিক্সাওয়ালা ঘামতে ঘামতে তাকে নিয়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে গুলিস্তানের দিকে চলে গেল। দুর্বচন: কখনােই স্কুটারওয়ালাদের জোরে স্কুটার চালানাের ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হয় না। 



No comments

Powered by Blogger.