ads

নেউল এবং মানুষ। বাচ্চাদের গল্প।

নেউল এবং মানুষ। বাচ্চাদের গল্প।


নেউল এবং মানুষ
সনাতন রূপ: একটা নেউল একজন মানুষের ঘর থেকে হাস মুরগী চুরি করে খেতাে। একদিন সে নেউলটাকে ধরে ফেলল। সে যখন সেটাকে পানিতে ডুবিয়ে মারার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিল নেউলটা কাতর গলায় বলল, দোহাই তােমার, তুমি আমাকে মেরাে না, আমি কি তােমার বাসা থেকে ইঁদুর ছুচো এই সব ধরে ধরে নিই নি ?

 মানুষটা বলল, তা সত্যি, তুমি কিছু কিছু ইঁদুর ছুচো এইসব ধরে ধরে মেরেছ। কিন্তু তার সাথে সাথে তুমি আমার এত হাঁস মুরগী ধরে ধরে খেয়েছ যে তােমার অপকার উপকার থেকে অনেক বেশী। তােমাকে মারা ছাড়া আমার কোন গতি নেই।

সুবচন: মানুষের ভাল কাজ তার খারাপ কাজ থেকে বেশী হওয়া দরকার।


আধুনিক রূপ: একাত্তরে একটা নেউল ধরা পড়েছে। সে মুখে ধর্মের কথা বলে এরকম একটা দলের সদস্য ছিল। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে মারতে শুরু করেছে তখন সে তার দলের অন্য অনেকের মত রাজাকারে যােগ দিয়েছিল। মুক্তিবাহিনীর একটা দল তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে সুপারী গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। অপরাধের বিচার করে যখন তাকে শাস্তি দেয়ার জন্যে অস্ত্র তােলা হয়েছে, তখন রাজাকার নেউলটি বলল, তােমরা সত্যি সত্যি আমাকে মেরে ফেলবে না ? | কে বলেছে মারব না? মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার বলল, তাের মত বিশ্বাসঘাতক খুনীদের এই দেশে কোন স্থান নেই। কিন্তু আমি তাে এই দেশের মানুষের অনেক উপকারও করেছি। কি উপকার করেছিস?
কাজেম আলীর ছেলে মুক্তিবাহিনীতে গিয়েছিল, তার বাড়ী জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছি। এখন সারা গ্রামের মানুষ বাসন মাজার জন্যে সেখান থেকে ছাই নিতে পারো।

মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আর কি উপকার করেছিস?

পাকিস্তান মিলিটারীদের জলীল মিয়ার বাড়ী নিয়ে গিয়েছি। জলীল মিয়ার বড় ছেলেটাকে মিলিটারীরা গুলি করে মেরেছে। জলীল মিয়া গরীব মানুষ, ছেলে মরে যাওয়ায় তার খরচ কমেছে।
কমান্ডার দাঁত কিড়মিড় করে বলল, আর কি উপকার করেছিস?
নেউল বলল, কেরামত আলীল মেজো মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল । মিলিটারী বাবারা এসেছিলেন গ্রামে। তাদের জন্যে সেই মেয়েটাকে ধরে দিয়ে দিয়েছিলাম। একটা বিয়ের কত খরচ, কত ঝামেলা—সব কিছু বেঁচে গেল ।
নেউল আরাে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার আর সহ্য করতে পারল না, তার রাইফেল গর্জে উঠল।

 দুর্বচন: বিশ্বাসঘাতকদের স্থান এদেশে নয়।

No comments

Powered by Blogger.