আদর্শ স্ত্রীর বিশেষ গুণ । এক স্বামী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা।
আদর্শ স্ত্রীর বিশেষ গুণ। এক স্বামী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা।
নেককার ও আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্য এই যে, সে সর্বাবস্থায় একজনকে নিয়েই জীবনযাপন করবে, একজনেরই হয়ে থাকবে। প্রথম স্বামী ব্যতীত দ্বিতীয় স্বামীর কল্পনাও করবে না। সুখ-সাচ্ছন্দ, আনন্দ উল্লাস, ভােগবিলাসের অবস্থা হােক অথবা দুঃখ-বেদনা, বালা-মুছীবতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হােক, গৃহ ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ থাকুক বা দারিদ্রে ভরা, ভ্রমনে কিংবা গৃহে অবস্থানরত অবস্থায় হােক না কেন? সর্বক্ষণ প্রাণপ্রিয় স্বামীকে পরামর্শ ও শান্তনার আঁচল দ্বারা আগলে রাখবে।
প্রসিদ্ধ প্রবাদ বাক্য “যখন তােমার কেউ ছিলনা তখন ছিলাম আমি, এখন তােমার সব হয়েছে, পর হয়েছি আমি” এর মত যেন না হয় যে, স্বামীর যখন ধন-ঐশ্বর্য, মাল-দৌলত ছিল, তখন খুব মুহাব্বত, প্রেমভালবাসা, ইজ্জত-সম্মানে অন্তরটা গদ গদ করত। আর যখন স্বামী দারিদ্রতায় জর্জরিত হয়ে রিক্ত-সিক্ত হস্তে মুহ্যমান, তখন তার সাথে অপরিচিতের মত দুব্যবহার করা। ..... এহেন দুরাচরণে একথা সুস্পষ্ট হয় যে, সে ধন-সম্পদের স্ত্রী ছিল, অর্থাৎ সম্পদ ও মালকেই সে বিবাহ করেছিল। ঐ স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি, যাকে সে হেয় প্রতিপ্লন করছে। | জ্ঞানবতী জান্নাতী নারীগণ একমাত্র মহান আল্লাহ তা'আলাকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্ত স্বামীকে মন প্রাণ দ্বারা ভালবাসবে, তার প্রেম-ভালবাসা, মান-অভিমান আপন স্বামী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। পৃথিবীর কোন বস্তুকে সে পরওয়া করবে না। তার নিকট মাওলার রেজামন্দী ও সন্তুষ্টি বড় পাওয়া । তাই সদা-সর্বদা স্বামীর ইজ্জত সম্মান করতে ত্রুটি করবে না। স্বামী যদি অসুস্থ হয়ে যায় অথবা সুস্থই থাকে, কোন অবস্থাতেই তাকে সেবা-যত্নের ক্রটি উপলব্ধি করতে দিবে না; বরং স্বামীর মৃত্যুর পরও তার নির্দেশিত পথ মত চলতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। যেহেতু স্বামীর জীবদশায় তার ইচ্ছা বিরুদ্ধে কোন কাজ করােনি, তাহলে তার মৃত্যুর পরবর্তী কালে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে করবে? তােমার আপত্তিকর ও অপছন্দনীয় আচরণে তােমার প্রানপ্রিয় মরহুম স্বামী বেহেশতবাসী আত্মা কি ব্যথিত হয়ে উঠবে?
তাহলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেন চলবে? ইসলামী ইতিহাসের মহান ন্যায় বিচারক, সফল রাষ্ট্রপ্রধান হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয (রাঃ)এর মৃত্যুর পর তার মহিয়সী স্ত্রীর নিকট তার ভাই প্রশ্ন করেছিল যে, যদি তুমি চাও, তাহলে তােমার বাজেয়াফকৃত অলংকার তােমাকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করি। তিনি বলেন, আমি যখন তার (স্বামীর) জীবদ্বশায় অলংকারে সন্তুষ্ট হয়নি, তখন তার মৃত্যুর পর ঐ ছাই এর প্রতি কি সন্তুষ্ট হব? | এমনই এক নেককার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে আরবের এক গ্রাম্য কবি খুব সুন্দর লিখেছেন যে, যখন তার গৃহে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা প্রচন্ড রূপ ধারণ করেছিল, তখন তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কোন ধুধু প্রান্তরে বসে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছিল। স্বামী এ দুআ পড়ে পড়ে আকুতিকাকুতি ও মিনতি প্রকাশ করছিল, হে আমার আল্লাহ! আমি এ মাঠ প্রান্তরে বসে আছি, যেমনটি আপনি অবলােকন করছেন। আমাদের উভয়ের উদর শূণ্য এবং আমরা ক্ষুধার্থ, যেমনটি আপনি জ্ঞাত আছেন। হে আমাদের পাওয়ারদেগার! আমাদের ব্যাপারে আপনার খেয়াল কি? আমাদের প্রতি একটু অনুগ্রহ করুন না? | লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উল্লেখিত ঘটনায় স্ত্রীও যদি স্বামীর এহেন। দারিদ্র পীড়িত পরিস্থিতিতে সামাল দিতে অসহায় স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে শান্তনার আঁচল বিছিয়ে না দেয় বরং ভৎসনা ও তিরস্কার করতে থাকে, তাহলে স্বামী বেচারা মানসিক চাপে ব্যধিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিকারগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে। স্বামীর ইহকালও নষ্ট পরকালও বরবাদ। যেমন- স্বামীর ব্যবসায় মন্দাভাব বা ব্যবসা লােপাট হয়ে গেছে অথবা চাকুরীচ্যুত হয়ে গেছে কিংবা ঋণ গ্রহিতাগণ টাকা হজম করে বসে গেছে, .... ইত্যাদি .... ইত্যাদি। এখন স্বামী বেচারা এত টেনশনযুক্ত যে, সংসারের ঘানি কিভাবে চলবে, তার দশা বা কুল কিনারা পাচ্ছে না। তখন স্ত্রীর কর্তব্য এই যে, চিন্তাযুক্ত স্বামীর কপালের ঘাম সহানুভূতিমাখা আঁচল দ্বারা মুছে দিতে দিতে বলবে, “কোন চিন্তা ভাবনা করবেন না। টাকা-পয়সা তাে হাতের ময়লা। আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি পুনরায় ফিরিয়ে দিতেও পারেন। ফিরিয়ে নেয়ার মধ্যে হয়ত কোন মঙ্গল নিহিত থাকতেও পারে। আপনি পাবন্দির সাথে নামায আদায় করতে থাকুন। চলতে ফিরতে “ইয়া মুগনী”, “ইয়া গণী” পাঠ করতে থাকুন। দেখবেন, রিযিকের ব্যবস্থা খুব শিগ্ৰহ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। | এখন পাঠকবৃন্দ বলুন, ঐ স্বামীর উপর যতই ঝড়-ঝাপটা আঘাত হানুক না কেন, যদি সে এমন শান্তনাদায়িনী সৌভাগ্যবতী স্ত্রী নসীবজোরে পেয়ে যায়, তাহলে সে পাহাড়সম বড় বড় পিবদাপদকে হিম্মত ও প্রবল মনােবল দ্বারা টলিয়ে দিতে পারবে। কঠিন কঠিন কার্যসমূহ তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। শত চিন্তা ও পেরেশানীর মাঝেও তার সম্মুখে এমন এমন পন্থা ও পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়ে যাবে, যার কল্পনাও হয়ত সে কখনাে করেনি। যার মাধ্যমে তার দুঃখ-কষ্টসমূহ আনন্দ-হরষে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। অসুস্থতা সুস্থতায় বদলে যেতে পারে। পেরেশানী খুশীর রূপ ধারণ করতে পারে। ভগ্ন হৃদয় সবল হয়ে যেতে পারে।
পক্ষান্তরে আমাদের সমাজে এমননা কুটনী নারী রয়েছে, যারা স্বামীর দাম্পত্য জীবনে এক বিষাক্ত কালনাগিনীর ভূমিকা পালন করছে, যারা নিজ স্বার্থ হাসিলের নিমিত্ত স্বামীর অর্থ-সম্পত্তিকে চুষে চুষে খাচ্ছে। যারা স্বামীর সামান্যতম সুখ-শান্তির প্রতি ক্ষেপও করেনা। ধিক!! এমন নারীদের প্রতি।





No comments
Post a Comment