ads

প্রিয় নবী সাঃ এর ওসিয়ত। পর্ব ৪।

প্রিয় নবী সাঃ এর ওসিয়ত। পর্ব ৪।



৬১. আলী! যে ব্যক্তি আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, কোন বিপদে পড়লে ধৈর্য ধারণ করে, পাপ করলে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে ব্যক্তি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।

৬২. আলী! অধিক ড্রিা অন্তরকে মুর্দা করে ফেলে এবং বিস্মৃতির জন্ম দেয়, আর অন্তর মরে যায় অতিরিক্ত হাসিতেও। পাপ হৃদয়কে কঠিন করে দেয় এবং অধিক দ্রিার জন্ম দেয়।

৬৩. আলী! তােমার প্রয়ােজনে কারাে কাছ থেকে চাইতে হলে দীপ্তমান চেহারার অধিকারী লােকের কাছে চাইবে। কারণ, এরূপ ব্যক্তির হৃদয় হয় উদার। আর তুমি চাইবে লজ্জাশীল লােকের কাছে। কারণ যাবতীয় কল্যাণ রয়েছে লজ্জাগুণের মধ্যে।

৬৪, আলী! যে ব্যক্তি ইজ্জত-সম্মান ও প্রাণ বাঁচানাের উদ্দেশ্যে হালাল উপায়ে দুনিয়া উপার্জন করে, সে পুলসিরাতে বিদ্যুতের গতিতে অতিক্রম করবে। আর আম্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হারাম উপায়ে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে দুনিয়া উপার্জন করে, সে আল্লাহর কাছে যখন যাবে তখন আল্লাহ তার প্রতি নারায থাকবেন।

৬৫. আলী! যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে হালাল উপার্জন থেকে আহার করাবে, আল্লাহ্ তার জন্য দশলাখ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন এবং অনুরূপ পাপ মােচন করবেন। | ৬৬. আলী! আল্লাহ্ তা'আলা তার বান্দাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা ফায়সালা করেন। যে এতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।

৬৭. আলী! তুমি সালাতে তাকবীর বলার সময় তােমার আঙ্গুলগুলাে ফাক করে রাখবে এবং তােমার উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে। আর যখন তুমি রুকূতে যাবে তখন তােমার উভয় হাত হাঁটুর উপর স্থাপন করবে। আর আঙ্গুলগুলাের মধ্যে ফাঁক রাখবে। আর সিজদা করার সময় তােমার উভয় হাত কাঁধ বরাবর রাখবে, তখন অঙ্গুলী মিলিয়ে রাখবে। তাকবীর বলার সময় তােমার ডান হাত বাঁ হাতের উপর নাভির নিচে রাখবে । আমি আসমানের ফেরেশতাগণকে এভাবে হাত রাখতে দেখেছি, এতে রয়েছে আল্লাহর প্রতি বিনয় ।

 ৬৮. আলী! তােমার মু’মিন ভাই-এর প্রয়ােজন দ্রুত পূরণ কর। কারণ, এতে আল্লাহ তা'আলা তােমার প্রয়ােজন দ্রুত পূরণ করবেন।

৬৯. আলী! তােমার কাছে কেউ প্রয়ােজন নিয়ে উপস্থিত হলে, তুমি মনে করবে যে, এর আগমন তােমার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ তাআলা হয়তাে তােমার গােনাহ মাফ করার ও প্রয়ােজন পূরণ করার ইচ্ছা করেছেন।

৭০, আলী! তােমার কাছে মেহমান এলে তুমি তাকে সম্মান করবে। কেননা, কারাে কাছে মেহমান এলে তার রিকও সে সঙ্গে নিয়ে আসে। আর যখন তিনি চলে যান, তখন তার সাথে মেযবানের পরিজনদের গােনাহও বহন করে নিয়ে যান এবং তা নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন।

৭১. আলী! ধন-সম্পদে তুমি তােমার নীচের স্তরের লােকের দিকে লক্ষ্য করবে। আর ইবাদত ও পরহেযগারীতে লক্ষ্য করবে তােমার চাইতে উপরের স্তরের লােকের দিকে। এতে তােমার ইয়াকীন ও ঈমান বৃদ্ধি পাবে।

৭২. আলী! তুমি মিথ্যা শপথ থেকে বিরত থাকবে। কারণ এতে পণ্য বিক্রয় হয় কিন্তু রিহ্যাকের বরকত কমে যায়।

৭৩. আলী! তুমি নিপীড়িতের দু'আকে ভয় করবে। কেননা, আল্লাহ্ নিপীড়িতের দু'আ কবুল করেন, সে কাফের হলেও।

৭৪. আলী! আল্লাহর ভয়ে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, তার কোন দীন নেই। আর যে পাপ থেকে বিরত থাকে না, তার জ্ঞান নেই। যার জ্ঞান নেই, তার ইবাদতও নেই। যার পরহেযগারী নেই, তার ইলম নেই। যার সত্যবাদিতা নেই, তার সৌজন্যবােধও নেই। যার পদাদারী নেই, তার আমানতদারীও নেই। যার তাওফীক নেই, তার তাওবাও নেই ! যার লজ্জা নেই, তার বদান্যতাও নেই।

৭৫. আলী! দিনের প্রারম্ভে ও শেষে ঘুমাবে না। আর ঘুমাবে না উপুড় হয়ে, আর ঘুমাবে না মাগরিব ও এশার সালাতের পূর্বেও। আর অন্ধকার গৃহেও ঘুমাবে না এবং কিছু রৌদ্র ও কিছু ছায়াতেও ঘুমাবে না। গৃহদ্বারের চৌকাঠকে তকিয়ার মত ব্যবহার করবে না। চৌকাঠের উপর বসবে না, বাম হাতে পানাহার করবে না। বসাবস্থায় হাত চিবুকের নিচে স্থাপন করবে না। কোন কিছু দিয়ে দাঁত ঠুকবে না। কাস্তের উপর আহার কররে না। পাত্রের উল্টো পিঠে আহার করবে না। ডান পায়ের পূর্বে বাম পায়ে জুতাে পরিধান করবে না। আর জুতাে খােলর সময় বাম পায়ের আগে ডান পায়ের জুতাে খােলবে না। রুটি দাঁত দিয়ে ছিড়ে টুকরাে টুকরাে করে আহার করবে না, মাটি খেওনা। রাতে আয়না দেখবে না। সালাতের সময় পানির দিকে তাকাবে না। পেশাবের উপর থুথু ফেলবে না। গােবর, বিষ্ঠা, কয়লা ও হাড় দিয়ে কুলুখ নিবে না। কামীছ উল্টো পরিধান করবে না। চাঁদ ও সূর্যের মুখখামুখি তােমার লজ্জাস্থান খােলবে।
দাঁত দিয়ে নখ কাটবে না। হাতে খাদ্যদ্রব্যের চর্বি রেখে ঘুমাবে না। এমন দু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চলবে না যে দু'পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। গরম খাদ্যদ্রব্যে এবং গরম পানিতে ফুক দিবে না। সিজদার স্থানেও ফুক দিবে না। তুমি অন্য কোন লােকের লজ্জাস্থান দেখবে না, অন্য কোন লােকও তােমার লজ্জাস্থান দেখবে না। আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলবে না। তােমা থেকে যা বের হয় (অর্থাৎ মলমূত্র) সে দিকে তাকাবে না। অপ্রয়ােজনে লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে না। পিছনের দিকে বারবার ফিরে তাকাবে না। বন্ধুকে কষ্ট দিবে না। প্রতিবেশীকে দুঃখ দিবে না। তােমার সঙ্গে যারা উঠাবসা করে তাদের গীবত করবে না। দ্রুত চলবে
। সাথীর সঙ্গে তর্ক করবে না, প্রশংসা করলে সংক্ষিপ্ত করবে এবং নিন্দা করলেও সংক্ষিপ্ত করবে। হাই তােলার সময় মুখে হাত দিবে। খাদ্যদ্রব্যের ঘ্রাণ শুকবে না। হারামের থেকে তােমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখবে। তােমাকে উদ্দেশ করে কথা বলা হলে, তুমি তা বুঝতে চেষ্টা করবে। যদি তােমাকে কেউ গােশতবিহীন পায়ার ( খালি হাড্ডি) আমন্ত্রণ জানায় তাও তুমি কবুল করবে। অন্ধকারে আহার করবে না, খাওয়ার সময় বড় বড় লােকমায় আহার করবে না। উদরপূর্তি করে আহার করবে না। | জীবিকার ফিকির নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে না। দুশমনের পিছে লেগাে না। তােমার গুপ্তভেদ প্রকাশ করবে না। অতিরিক্ত কথা বলবে না। বস্ত্র পরিধান করে গর্ব করবে। আমানত ফেরত দিবে । মেহমানের সাথে সৌজন্যাচরণ করবে। প্রতিবেশীর হেফাযত করবে। মুসীবতে ধৈর্যধারণ করবে। ভাল কাজে ব্যয় করবে। কাল নাজাত পাবে দুই শ্রেণীর লােক ও দানশীল ধনী ও প্রফুল্লচিত্ত ফকীর।

৭৬. আলী! তুমি হবে আলিম অথবা শিক্ষার্থী অথবা শ্রোতা অথবা আমল করনেওয়ালা। চতুর্থজন হলে তুমি হালাক হয়ে যাবে। আলী (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! চতুর্থজন কে ? রাসূলুন্নাহ্ (সা) বললেন, যে নিজে ইলম রাখে না এবং কারাে কাছ থেকে শিক্ষাও করে না। আলিমগণের কাছে গিয়ে শরীআতের আহকামের খোজ-খবর নেয় না। অজ্ঞদের মত কাজ করে। নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত, নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত, নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত ।

৭৭. আলী! সে বন্ধু বড়ই মন্দ, যে তােমাকে কষ্টে ফেলে এবং তােমার গােপন ভেদ প্রকাশ করে দেয়। | সে বন্ধু ও মন্দ, যে বন্ধুর প্রতি হিংসা পােষণ করে। তুমি এমন খাদেম পছন্দ করবে না, যে তােমার দোষ প্রকাশ করে, আর এমন স্ত্রীও পছন্দ করবে না, যে তালাক চায়। আর এমন প্রতিবেশীর উপরও সন্তুষ্ট থাকবে না, যে তােমার ভাল কাজ গােপন করে এবং ক্রটি প্রচার করে।

৭৮. আলী! ওযূ পূর্ণরূপে করবে। কারণ এ হলাে ঈমানের অর্ধেক। ওযূতে পানির অপচয় করবে না।

৭৯, আলী! ওযূ সমাপ্ত করার পর উভয় পা ধুয়ে একবার সূরা ইন্নাআনযাল নাহু ফিলাইলাতিল- কাদর’ পাঠ করবে। তা করলে তােমার জন্য পঞ্চাশ বছরের সওয়াব লেখা হবে।

৮০. আলী! ওহ্ সমাপ্ত করার পর উভয় পা ধুয়ে নবী করীম (সা)-এর প্রতি দশবার দরূদ পড়বে। এরূপ করলে আল্লাহ্ তা'আলা তােমার পেরেশানী দূর করে দিবেন। আর তােমার দু'আ তিনি কবুল করবেন।

No comments

Powered by Blogger.