বারমুডার আকাশ...... বিমান শিকারস্থল।
বারমুডার আকাশ, বিমান শিকারস্থল।
বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলে বড় বড় জাহাজ গায়েব হয়ে যাওয়া কি কম রহস্যের বিষয়; কিন্তু আকাশে উড়ন্ত বিমানও যদি কোন অজানা ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা শুরু করে পরে আর ফিরে না আসে। যুদ্ধ বিমান এবং যাত্রীবাহী বিমান উড়তে উড়তে হঠাৎ বারমুডার আকাশে গায়েব হয়ে যাওয়া। অথচ আকাশ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও পরিস্কার!! তাহলে আপনি কি বলবেন! আকাশ কি এগুলাে গিলে ফেলেছে ?? বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের পানির অভ্যন্তরে বিদ্যমান কোন গােপন শক্তি তাকে ধরাশায়ী করেছে ?? পরবর্তীতে না এর কোন পাত্তা পাওয়া যায়। না পাইলট এয়ারপাের্টে দ্রুত কোন বার্তা প্রেরণে সক্ষম হয়। কখনাে কোন বার্তা পৌঁছলেও তা বুঝা যাচ্ছিলনা।
১৯৪৫ সালে সন্ধাকালীন একটি ঘটনা তার রহস্য আরাে বাড়িয়ে দিয়েছে। সবেমাত্র আকাশ সন্ধা হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া এবং আকাশ ছিল খুবই সাধারণ ও পরিস্কার। পাইলটদের প্লেন ট্রেনিংয়ের জন্য এমন স্বচ্ছ আকাশ খুবই মানানসই। আমেরিকা শাসিত "ফ্লোরিডা" শহরের এক এয়ারবিস থেকে বারটি জঙ্গি বিমান ট্রেনিংয়ের জন্য আকাশে উড্ডয়ন করে। সবগুলাে বিমানই একসাথে প্রথম রাউন্ড সম্পন্ন করেছে। অতপর কেন্দ্র থেকে সবগুলােকে পৃথক পৃথক রাউন্ডের আদেশ দেয়া হয়। সুতরাং সবকটি প্লেন পৃথকভাবে রাউন্ড দিতে থাকে। রাউন্ড দেয়ার সময় কোন পাইলটের কাছ থেকে কোন পেরেশানী বা সমস্যার বার্তা পাওয়া যায়নি। তাহলে বুঝা গেল- সবকিছু ঠিকঠাকমতেই চলছিল। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর সবগুলাে প্লেনই এয়ারবিসে লেন করার উদ্দেশ্যে ফেরত আসতে লাগল। দশটি আসল কিন্তু দুটি প্লেন গায়েব হয়ে গেল। মার্কিন আকাশ পথ গবেষকদের একটি টিম ওই এলাকার আকাশপথ ও সমুদ্রপথে এদের তন্ন তন্ন করে খুজল। কোন হদিস পেলনা। এয়ারবিসে কোন দুর্ঘটনা বা সাহায্য প্রার্থণার বার্তাও পৌছেনি। এতবড় বিমান বারমুডার আকাশে গায়েব হল নাকি পানির নিচে চলে গেল। কোন পাত্তা নেই।!!
ফ্লাইট ১৯.... ছয়টি প্লেনেরে ঐতিহাসিক ভ্রমণ..
একই বৎসর (১৯৪৫) ডিসেম্বর মাস। কারাে কি জানা ছিল ?! যে, ওই এলাকার প্রসিদ্ধ নাম "শয়তানী দ্বীপ" পরিবর্তন করে 'বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল" দেয়া হবে। পানিতে ট্রাইএঙ্গেলের আকৃতি কি করে সম্ভব ?! তা। গবেষণা ছাড়াই সারাবিশ্বের মানুষ তাকে ওই নামেই চিনতে শুরু করবে!! তা সত্ত্বেও প্রেস কনফারেন্সে মার্কিন দায়িত্বশীলগণ এক্ষেত্রে ট্রাইএঙ্গেলের নাম কেন ব্যবহার করল ??!! তাহলে কি দাজ্জালের ট্রাইএঙ্গেল বা ইহুদীদের গােপন সংগঠন "ফ্রেমেসন" এর ট্রাইএঙ্গেলের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে ??!! | সুদক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক পাইলট, ৩০০ থেকে ৪০০ ঘন্টা একাধারে প্লেন কেন্ট্রোলের অভিজ্ঞতা যার মধ্যে বিদ্যমান। কালের সর্বাধুনিক জঙ্গি বিমান যার মালিকায়। তাছাড়া আবহাওয়াবস্থা সম্পর্কেও যিনি খুব ভাল জ্ঞাত। এমন এক পাইলট তার প্লেনসহ হঠাৎ বারমুডার আকাশে গায়েব হয়ে যাওয়া। তাও আবার একটি দুটি নয়; পাঁচটি প্লেন একসাথে!!
সময়টা ছিল ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। আনুমানিক দুইটা দশ মিনিটে আমেরিকা শাসিত "ফ্লোরিডা"র ফোর্ট লাডারডেইল (Fort Lauderdale) এয়ারপাের্ট থেকে ফ্লাইট-১৯ এর পাঁচটি এভেঞ্জার প্লেন উড্ডয়ন করে এবং নির্দিষ্ট এরিয়ায় কয়েকটি রাউন্ড সম্পন্ন করে। এরপর আনুমানিক চারটার সময় এক পাইলটের কাছ থেকে এয়ারপাের্ট অফিসে নিম্নোক্ত বার্তা প্রেরিত হয় (স্কোয়াডার্ন কমান্ডার আহবান করছে):পাইলট : আমরা আশ্চর্য ও বিরল পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি...। মনে হচ্ছে- আমরা আমাদের এরিয়া থেকে সরে গেছি...। ভূমি দেখতে পাচ্ছিনা...। আমি ভূমি দেখতে পাচ্ছিনা...। এয়ারপাের্ট : আপনি এখন কোন জায়গায় আছেন ? পাইলট : জায়গা নির্দিষ্ট করতে পারছিনা...। বুঝতে পারছিনা.. আমরা এখন কোথায় আছি ...। আমার ধারনা... আকাশেরই কোথাও আমরা হারিয়ে গেছি...। এয়ারপাের্ট : পশ্চিম দিকে ফ্লাইং করতে থাকুন...।
পাইলট : আমি বুঝতে পারছিনা... পশ্চিম কোন দিকে...! সবকিছুই অচেনা এবং আশ্চর্য ধরনের দেখা যাচ্ছে...। এমনকি আমাদের সামনে সমুদ্রও আশ্চর্য আকৃতিতে দেখা যাচ্ছে...। এটাও আমি চিনতে পারছিনা...। এয়ারপাের্টের কর্মরত সকলেই অবাক ছিল। বুঝে আসছিলনা- এত দক্ষ পাইলট দিক কেন দির্ধারণ করতে পারছেনা ?!! কেননা প্লেনের নেভিগেশন সিষ্টেম (দিক নির্ধারনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি) যদি কাজ নাও করে, তবুও সময়টা তাে ছিল বিকালবেলা; সূর্যাস্তের সময়। সূর্য দেখে সহজেই পশ্চিম দিক নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু পাইলট বলছে যে, সে দিক নির্ধারণ করতে পারছেনা। তাহলে সে কোথায় চলে গিয়েছিল ??!! অতপর এয়ারপাের্টের সাথে পাইলটের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়াও তখন ওই পাঁচ পাইলট একে অপরের কাছে যে বার্তা পেরণ করছিল; তাও এয়ারপাের্ট অফিস রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছে। যাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল যে, বাকী চারটি প্লেনও একই পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে। কিছুক্ষণ পর জর্জ স্টিউর্জ নামক আরেক পাইলটের বিচলিত কন্ঠ শুনা যায় : "আমরা সঠিক বলতে পারছিনা যে, এই মুহুর্তে আমরা কোথায় আছি...। আমরা ধারনা যে, আমরা এয়ারপাের্ট থেকে ২২৫ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ফ্লাই করছি...।" এর কিছুক্ষণ পর সে বলতে লাগল : "মনে হচ্ছে আমরা সাদা পানিতে প্রবেশ করছি...। আমরা সম্পূর্ণরূপে দিকভ্রান্ত হয়েছি...।" এরপর ওই পাঁচটি প্লেন চিরদিনের জন্য সমুদ্রের পানিতে হারিয়ে যায়।।
ওইদিন সন্ধা ৭:৩০ মিনিটে মার্টিন মেরিনার (Martin Mariner) নামক একটি বিমান এই পাঁচটি প্লেন তালাশের জন্য বের হয়। এটি ছিল হারিয়ে যাওয়া প্লেন তালাশের স্পেশাল বিমান। পানিতে অবতরনের সুবিধাও তাতে বিদ্যমান ছিল। কোন প্লেন যদি সমুদ্রে পড়ে যায়, তা উদ্ধারের জন্য এই বিমান ব্যবহৃত হত। মার্টিন মেরিনার ওই স্থানে গিয়ে এয়ারপাের্টের সাথে যােগাযােগ করল। কিছুক্ষন পর এরও যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। অন্যকে তালাশ করতে গিয়ে নিজেই গায়েব। এরও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তৎক্ষনাৎ ওই ছয় প্লেন খােজার জন্য মার্কিন আকাশপথ ও সমুদ্রপথ টিম কোষ্টগার্ড সাথে নিয়ে ওই এলাকার আকাশ ও সমুদ্র পথে বহু খােজাখােজি করল; কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মধ্যরাতে এয়ারপাের্ট অফিসে এক অস্পষ্ট বার্তা পৌছে : FT";;;;;;;;FT" বার্তা প্রেরণকারীর ভাষা অন্যরকম লাগছিল। এই বার্তা এয়ারপাের্ট অফিসে কর্মরত সকল কর্মীকে আরাে পেরেশান করে দিল; কারণ এই কোড শুধুমাত্র ফ্লাইট-১৯ এর কর্মীরাই ব্যবহার করে। থাকে। তার মানে তখন পর্যন্ত ওই পাইলটদের কেউ না কেউ জীবিত ছিল। কিন্তু কোথায় ?? মধ্যরাতে এই বার্তা পাওয়ার পূর্বেও তাে ওই এলাকায় তাদের অনেক খােজাখােজি করা হয়েছিল। তাহলে এই বার্তা কোন জায়গা থেকে প্রেরণ করা হয়েছে ?? তাহলে কি বারমুডার পানির গভীরে তাদের গুম করা হয়েছে ?? অতপর কোষ্টগার্ডের লােকেরা সারারাত তাদের তালাশে নিয়ােজিত থাকে। পরদিন সকালে তিনশত প্লেন, হাজার হাজার স্পীডবুট এবং বেশকিছু সাবমেরিনসহ ওই এলাকায় নিয়ােজিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পর্যন্ত এদের উদ্ধারের জন্য বের হয়। কিন্তু এতটুকু পর্যন্ত বের করতে সক্ষম হয়নি যে, ওরা কিরূপ দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয়েছে বা তারা কোথায় চলে গেছে !! এ ধরনের দুর্ঘটনা দ্বিতীয়বার যাতে আর না ঘটে, সে জন্য গবেষকদের দিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এ কমিটি তদন্ত তাে দূরের কথা; স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা বা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য পর্যন্ত করতে সক্ষম হয়নি। তবে কমিটি প্রধানের পক্ষ থেকে এ ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে যে, "ওই প্লেনগুলি যাত্রী পাইলট ও কর্মচারীদের নিয়ে কোথাও যেন গুম হয়েছে, মনে হচ্ছে বাতাসের সাথে উড়ে তারা অন্য জগতে পাড়ি জমিয়েছে।" এখন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। যদি কোন দুর্ঘটনারই সম্মুখিন হয়ে থাকে, তবে তাে তাদের প্রত্যেকের কাছেই "লাইফজ্যাকেট" বা প্যারাসুট ছিল। এর দ্বারা ভূমিতে জরুরী অবতরণ করতে পারত। তাহলে এতটুকু সুযােগও কি তাদের মেলেনি ?? দ্বিতীয় কথা- প্লেনগুলি সন্ধার সময় গায়েব হয়েছে। তৎক্ষনাৎ বহু খােজাখােজি এবং তালাশের পরও তাদের কোন বাতাস পাওয়া যায়নি। তাহলে মধ্যরাতে যে বার্তা প্রেরণ করা হল; যােগাযােগ কোন জায়গা থেকে করা হল ??!!
দুর্ঘটনার সময় নিকটবর্তী স্থান হতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনাও কোন রহস্যময় বস্তুর দিকে ইঙ্গিত করে : যেমন- তালাশে নিয়ােজিত জাহাজের কর্মীরা এই কথাটি নােট করেছে যে, একস্থানে সমুদ্রের উপরিভাগে পানির কিছু অংশ বিশেষ কোন আকৃতির) পর্যায়ের, অতপর তা সাদা রঙ্গে পরিবর্তন হয়ে গেল। স্মরণ রাখা দরকার- এরকম বিশেষ আকৃতির ফ্লাইং সােসার্স (প্লেটের মত ফ্লাইং করে এমন বস্তু) বারমুডার পানিতে প্রায়ই প্রবেশ করতে দেখা গেছে। DC-3 একটি যাত্রীবাহী বিমান ছিল। যারমধ্যে ত্রিশজন পুরুষ সপরিবারে আরােহন করেছিল। তারা সবাই ছুটি কাটিয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছিল। বিমানটি "পিেরটোরিকো" থেকে ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে ফ্লাই করল। ফ্লোরিডা এয়ারপাের্টের কাছে এসে লেনের প্রস্তুতি নিতে নিতে গায়েব হয়ে যায়। পাইলট এয়ারপাের্ট অফিসে লেনের অনুমতিও চেয়েছিল, তাকে অনুমতি দেয়াও হয়েছিল। কিন্তু এ প্লেন অজানা কোন স্থানে লেন করে। ফেলে। পরে এদেরও কোন খবর পাওয়া যায়নি। বারমুডার ব্যাপারে গবেষণাকারী কতিপয় লােকদের বক্তব্য হচ্ছে- ঐ এলাকায় গায়েব হওয়া সকল মানুষই জীবিত রয়েছে। কিন্তু অন্য কোন জায়গায়। বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের পানির অভ্যন্তরে অজানা ঐ "গােপন শক্তি" তাদের অন্য কোথাও নিয়ে গেছে। কোন অজানা স্থানে...।" | এ সকল দুর্ঘটনার বিবরণ পড়ার পর আপনিও অনুধাবন করতে পারবেন যে, প্লেনগুলিতে কোন যান্ত্রিক গােলযােগ ছিলনা; বরং (গুম হওয়ার সময়) তাদের উপর এক ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাও আবার খুব দ্রুত গতিতে। অতপর কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের গায়েব করে দেয়া হয়েছে। চিরদিনের জন্য। কিন্তু কোথায় ?? এ প্রশ্ন সারাবিশ্বের সকল মানুষের জন্য খুবি গুরুত্বপূর্ণ।







No comments
Post a Comment