ইসলামিক উপন্যাস। মহিয়সী নারী। পর্ব ৫
ইসলামিক উপন্যাস। মহিয়সী নারী। পর্ব ৫
মাযহারুল ইসলাম সাহেব ঘরে বসে আছেন। এমন সময় শুনতে পেলেন বাহিরে মাইকিং হচ্ছে। খেয়াল করে শুনলেন মাইকিংয়ে বলা বিষয়বস্তু। বুঝতে পারলেন, আজ বিকাল চারটা থেকে স্কুল মাঠে ওয়াজ-মাহফিল হবে। দেশ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম তাশরীফ আনবেন। তিনি ভাবলেন আমার যাওয়া দরকার। ব্যস্ততার কারনে দূরের ওয়াজে যেতে পারিনা। এটা যেহেতু কাছে তাই এটা মিস করা ঠিক হবে না। স্ত্রী আমেনাকে ডেকে বললেন - শোনো আমি বিকালে ওয়াজ শুনতে যাব। আসতে রাত হবে। তুমি নাজিফাকে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিও। আমরা আগে খেয়ে নেব কেনো ? আপনি আসলে সবাই একসাথেই খাব। আমার আসতে দেরী হতে পারে, ওয়াজ কখন শেষ হয়, তার ঠিক আছে? তুমি না হয় না খেয়ে ততক্ষন থাকতে পারবে, কিন্তু নাজিফা তো ছোট মানুষ। ওর তো কস্ট হবে। তাই বলছি আমার জন্যে দেরী না করে এশার নামাজের পর খেয়ে নিও। ঠিক আছে। আসর নামাজের পরে ওয়াজ শুনতে গেলেন মাযহারুল ইসলাম সাহেব। ওয়াজ শুনে বাড়ি ফিরলেন রাত ১১-টায়। আমেনা বেগম বললেন হাত-মুখ ধুয়ে আসুন। আমি খাবার প্রস্তুত করছি। তোমরা খেয়েছো.?? হ্যা আমরা খেয়েছি। নাজিফা কখন ঘুমিয়েছে...?? খাওয়ার পর পরই ঘুমিয়েছে। আপনার কথা কয়েকবার জিজ্ঞাসাও করেছে, আব্বা কখন আসবে?? তুমি কি বলেছো..?? বলেছি তুমি ঘুমাও। উনি ওয়াজ শেষ হলেই বাড়িতে চলে আসবেন। হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসলেন মাযহার সাহেব।
খাবার খেতে খেতে বলতে লাগলেন- ওয়াজ থেকে শুনে আসা বিভিন্ন কথা। এক পর্যায়ে তিনি বললেন জানো- নাজিফার মা! আজ ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পর থেকেই কেমন জানি- মনে হয়েছে যে, এটাই আমার জীবনের শেষ ওয়াজ। কি যা তা বলছেন..? জীবনের শেষ ওয়াজ হবে কেনো? আল্লাহ্ তায়ালার রহমতে আপনি তো এখন পূর্ন সুস্থ মানুষ। অযথা আজে বাজে চিন্তা করেন কেন? কেনো মনে হয়েছে তা জানিনা, তবে এটা তো জানো যে, সুস্থ শরীরকে অসুস্থ করতে আল্লাহ্ পাকের এক সেকেন্ডও সময় লাগেনা। স্বামীর এহেন কথায় বেশ উদ্ধীগ্ন হলেন আমেনা বেগম। বললেন - কি হয়েছে আপনার বলুনতো! হঠাত মৃত্যুর কথা স্বরন হচ্ছে কেনো? স্ত্রীর উদ্ধেগ দেখে মুচকি হাসলেন মাযহারুল সাহেব।
এরপর বললেন- আমি যে বোকা! এই জন্যেই হঠাত মৃতুর কথা স্বরন হচ্ছে। অন্যথায় সদা- সর্বদাই তো মৃত্যুর কথা স্বরন হওয়ার কথা ছিলো। কেননা, হায়াতের এক সেকেন্ডেরও গ্যারান্টি নেই। যে কোন সময় যে কোন মানুষ মারা যেতে পারে। তাই প্রতিদিনই মনে করা উচিৎ যে, আজই আমার জীবনের শেষ দিন। যা আমল করার আজই করতে হবে। আর মৃত্যুর কথা স্বরন থাকলেই মানুষ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। যারা বিভিন্ন-অন্যায় অপরাধে লিপ্ত তারা ভুলে গেছে যে, তাদের একদিন মরতে হবে। অন্ধকার কবরে যেতে হবে। তাই তারা অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে। যদি মৃত্যুর কথা সদা সর্বদা স্বরন থাকত তাহল কোনই অপকর্ম করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত না। তাইতো রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - যে ব্যক্তি দৈনিক বিশ বার মৃত্যুর কথা স্বরন করবে, সে ব্যক্তি হাসরের ময়দানে শহীদদের সাথে উঠবে। খাওয়া শেষ হলো মাযহার সাহেবের। উঠে দাঁড়াবেন ঠিক এমন সময় বুকে ব্যথা উঠলো। তিনি দাঁড়াতে পারলেন না। স্ত্রীকে বললেন হঠাত বুকে ব্যাথা উঠলো কেন কিছু বুঝলাম না। একটু পানি দাও তো! আমেনা বেগম পানি দিলেন। তিনি পানি পান করলেন। কিন্তু ব্যাথা কমলো না। ধীরে ধীরে ব্যাথা তীব্র আকার ধারন করলো। তিনি বসে থাকতে পারলেন না সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন। স্বামীর এ অবস্থা দেখে চিৎকার দিলেন আমেনা বেগম। তার চিৎকারে ঘুম ভেংগে গেলো নাজিফার। মাকে কাঁদতে দেখে নাজিফাও চিৎকার দিয়ে উঠলো। মা-মেয়ের চিৎকারে ভারী হয়ে উঠলো পরিবেশ।
হঠাত আমেনার মনে হলো- কান্নাকাটি করে কি লাভ? এতে উনি সুস্থ হবেন না। এর চেয়ে বরং উনার বড় ভাই শামছুর রহমানকে ফোন করে আসতে বলি। যেই ভাবা সেই কাজ। শামছুর রহমান জেগেই ছিলেন। আর বাড়িও পাশাপাশি হওয়ায় ফোন পেয়ে আসতে দেরী হলো না। শামছুর রহমানকে দেখে আমেনা বেগম অন্য ঘরে চলে গেলেন। নাজিফা রইল বাবার পাশে। শামছুর রহমান দেখলেন ছোট ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা ভাল মনে হচ্ছে না। তাই তিনি আমেনাকে বললেন তুমি মাযহারুল ইসলামের পাশে বসো। আমি ডাক্তার ডেকে আনছি। এর মধ্যে তুমি একটু তেল গরম করে বুকে মালিশ করে দাও, দেখো ব্যাথা কমে কি না। শামছুর রহমান চলে গেলেন ডাক্তার আনতে। আর আমেনা বেগম তেল গরম করতে গেলেন। নাজিফা বাবার পাশে বসা। আমেনা তেল গরম করতে যাবার সময় মাযহার সাহেব আমেনার শাড়ির আচল ধরে টান দেন। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। তাই হয়তো শাড়ীর আচল টেনে ধরে আমেনাকে বলতে চেয়েছিলেন- প্রানপ্রিয়া আমাকে রেখে যেওনা। আমার পাশে বসো। কিন্তু মাযহার সাহেবের ইংগিত বুঝতে পারলেন না আমেনা বেগম। তিনি আচল ছাড়িয়ে চলে গেলেন তেল গরম করতে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তেল গরম করে নিয়ে এলেন। কিন্তু ততক্ষণে মাযহারুল ইসলাম সাহেব অচেতন হয়ে পড়েছেন। ক্ষনিক পরেই ডাক্তার এলো। তিনি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে বললেন - সম্ভবত তিনি স্ট্রোক করেছেন। আল্লাহ্, কে ডাকেন। দেখেন জ্ঞান ফিরে আসে কি না।
প্রিয় পাঠক, ৬ নম্বর পর্ব আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আপনাদের মাঝে প্রকাশ করবো দোয়া করিবেন, মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে যেন সফলতা দান করেন, এবং আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে দ্বীনের খেদমতে কবুল করেন। আমীন ছুম্মা আমীন। -----------------------------------------------------------------------
সিরিজঃ মহীয়সী নারী। পার্ঠ (৫)
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মফীজুল ইসলাম
সংকলনেঃ আমি হাফেজ মুহাম্মাদ জিয়াউর রহমান
মাযহারুল ইসলাম সাহেব ঘরে বসে আছেন। এমন সময় শুনতে পেলেন বাহিরে মাইকিং হচ্ছে। খেয়াল করে শুনলেন মাইকিংয়ে বলা বিষয়বস্তু। বুঝতে পারলেন, আজ বিকাল চারটা থেকে স্কুল মাঠে ওয়াজ-মাহফিল হবে। দেশ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম তাশরীফ আনবেন। তিনি ভাবলেন আমার যাওয়া দরকার। ব্যস্ততার কারনে দূরের ওয়াজে যেতে পারিনা। এটা যেহেতু কাছে তাই এটা মিস করা ঠিক হবে না। স্ত্রী আমেনাকে ডেকে বললেন - শোনো আমি বিকালে ওয়াজ শুনতে যাব। আসতে রাত হবে। তুমি নাজিফাকে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিও। আমরা আগে খেয়ে নেব কেনো ? আপনি আসলে সবাই একসাথেই খাব। আমার আসতে দেরী হতে পারে, ওয়াজ কখন শেষ হয়, তার ঠিক আছে? তুমি না হয় না খেয়ে ততক্ষন থাকতে পারবে, কিন্তু নাজিফা তো ছোট মানুষ। ওর তো কস্ট হবে। তাই বলছি আমার জন্যে দেরী না করে এশার নামাজের পর খেয়ে নিও। ঠিক আছে। আসর নামাজের পরে ওয়াজ শুনতে গেলেন মাযহারুল ইসলাম সাহেব। ওয়াজ শুনে বাড়ি ফিরলেন রাত ১১-টায়। আমেনা বেগম বললেন হাত-মুখ ধুয়ে আসুন। আমি খাবার প্রস্তুত করছি। তোমরা খেয়েছো.?? হ্যা আমরা খেয়েছি। নাজিফা কখন ঘুমিয়েছে...?? খাওয়ার পর পরই ঘুমিয়েছে। আপনার কথা কয়েকবার জিজ্ঞাসাও করেছে, আব্বা কখন আসবে?? তুমি কি বলেছো..?? বলেছি তুমি ঘুমাও। উনি ওয়াজ শেষ হলেই বাড়িতে চলে আসবেন। হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসলেন মাযহার সাহেব।
খাবার খেতে খেতে বলতে লাগলেন- ওয়াজ থেকে শুনে আসা বিভিন্ন কথা। এক পর্যায়ে তিনি বললেন জানো- নাজিফার মা! আজ ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পর থেকেই কেমন জানি- মনে হয়েছে যে, এটাই আমার জীবনের শেষ ওয়াজ। কি যা তা বলছেন..? জীবনের শেষ ওয়াজ হবে কেনো? আল্লাহ্ তায়ালার রহমতে আপনি তো এখন পূর্ন সুস্থ মানুষ। অযথা আজে বাজে চিন্তা করেন কেন? কেনো মনে হয়েছে তা জানিনা, তবে এটা তো জানো যে, সুস্থ শরীরকে অসুস্থ করতে আল্লাহ্ পাকের এক সেকেন্ডও সময় লাগেনা। স্বামীর এহেন কথায় বেশ উদ্ধীগ্ন হলেন আমেনা বেগম। বললেন - কি হয়েছে আপনার বলুনতো! হঠাত মৃত্যুর কথা স্বরন হচ্ছে কেনো? স্ত্রীর উদ্ধেগ দেখে মুচকি হাসলেন মাযহারুল সাহেব।
এরপর বললেন- আমি যে বোকা! এই জন্যেই হঠাত মৃতুর কথা স্বরন হচ্ছে। অন্যথায় সদা- সর্বদাই তো মৃত্যুর কথা স্বরন হওয়ার কথা ছিলো। কেননা, হায়াতের এক সেকেন্ডেরও গ্যারান্টি নেই। যে কোন সময় যে কোন মানুষ মারা যেতে পারে। তাই প্রতিদিনই মনে করা উচিৎ যে, আজই আমার জীবনের শেষ দিন। যা আমল করার আজই করতে হবে। আর মৃত্যুর কথা স্বরন থাকলেই মানুষ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। যারা বিভিন্ন-অন্যায় অপরাধে লিপ্ত তারা ভুলে গেছে যে, তাদের একদিন মরতে হবে। অন্ধকার কবরে যেতে হবে। তাই তারা অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে। যদি মৃত্যুর কথা সদা সর্বদা স্বরন থাকত তাহল কোনই অপকর্ম করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত না। তাইতো রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - যে ব্যক্তি দৈনিক বিশ বার মৃত্যুর কথা স্বরন করবে, সে ব্যক্তি হাসরের ময়দানে শহীদদের সাথে উঠবে। খাওয়া শেষ হলো মাযহার সাহেবের। উঠে দাঁড়াবেন ঠিক এমন সময় বুকে ব্যথা উঠলো। তিনি দাঁড়াতে পারলেন না। স্ত্রীকে বললেন হঠাত বুকে ব্যাথা উঠলো কেন কিছু বুঝলাম না। একটু পানি দাও তো! আমেনা বেগম পানি দিলেন। তিনি পানি পান করলেন। কিন্তু ব্যাথা কমলো না। ধীরে ধীরে ব্যাথা তীব্র আকার ধারন করলো। তিনি বসে থাকতে পারলেন না সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন। স্বামীর এ অবস্থা দেখে চিৎকার দিলেন আমেনা বেগম। তার চিৎকারে ঘুম ভেংগে গেলো নাজিফার। মাকে কাঁদতে দেখে নাজিফাও চিৎকার দিয়ে উঠলো। মা-মেয়ের চিৎকারে ভারী হয়ে উঠলো পরিবেশ।
হঠাত আমেনার মনে হলো- কান্নাকাটি করে কি লাভ? এতে উনি সুস্থ হবেন না। এর চেয়ে বরং উনার বড় ভাই শামছুর রহমানকে ফোন করে আসতে বলি। যেই ভাবা সেই কাজ। শামছুর রহমান জেগেই ছিলেন। আর বাড়িও পাশাপাশি হওয়ায় ফোন পেয়ে আসতে দেরী হলো না। শামছুর রহমানকে দেখে আমেনা বেগম অন্য ঘরে চলে গেলেন। নাজিফা রইল বাবার পাশে। শামছুর রহমান দেখলেন ছোট ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা ভাল মনে হচ্ছে না। তাই তিনি আমেনাকে বললেন তুমি মাযহারুল ইসলামের পাশে বসো। আমি ডাক্তার ডেকে আনছি। এর মধ্যে তুমি একটু তেল গরম করে বুকে মালিশ করে দাও, দেখো ব্যাথা কমে কি না। শামছুর রহমান চলে গেলেন ডাক্তার আনতে। আর আমেনা বেগম তেল গরম করতে গেলেন। নাজিফা বাবার পাশে বসা। আমেনা তেল গরম করতে যাবার সময় মাযহার সাহেব আমেনার শাড়ির আচল ধরে টান দেন। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। তাই হয়তো শাড়ীর আচল টেনে ধরে আমেনাকে বলতে চেয়েছিলেন- প্রানপ্রিয়া আমাকে রেখে যেওনা। আমার পাশে বসো। কিন্তু মাযহার সাহেবের ইংগিত বুঝতে পারলেন না আমেনা বেগম। তিনি আচল ছাড়িয়ে চলে গেলেন তেল গরম করতে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তেল গরম করে নিয়ে এলেন। কিন্তু ততক্ষণে মাযহারুল ইসলাম সাহেব অচেতন হয়ে পড়েছেন। ক্ষনিক পরেই ডাক্তার এলো। তিনি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে বললেন - সম্ভবত তিনি স্ট্রোক করেছেন। আল্লাহ্, কে ডাকেন। দেখেন জ্ঞান ফিরে আসে কি না।
প্রিয় পাঠক, ৬ নম্বর পর্ব আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আপনাদের মাঝে প্রকাশ করবো দোয়া করিবেন, মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে যেন সফলতা দান করেন, এবং আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে দ্বীনের খেদমতে কবুল করেন। আমীন ছুম্মা আমীন। -----------------------------------------------------------------------
সিরিজঃ মহীয়সী নারী। পার্ঠ (৫)
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মফীজুল ইসলাম
সংকলনেঃ আমি হাফেজ মুহাম্মাদ জিয়াউর রহমান





No comments
Post a Comment