ads

ইসলামিক উপন্যাস। মহিয়সী নারী। পর্ব ৩

ইসলামিক উপন্যাস। মহিয়সী নারী। পর্ব ৩।



খুব কম মেয়েরাই হাফেজা হতে পারে। কারন হিসেবে বলা যায়- ১. মেধার দুর্বলতা, ২. মেয়েদের শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের উদাসীনতা। মেয়েরাও যে ছেলেদের মত পবিত্র কুরআনের হাফেজা হতে পারে, একথা অনেক অভিভাবকই বিশ্বাস করতে চায় না। শুধু তাই ই নয় অনেকে তো বলে ফেলেছে- মেয়ে মানুষ কি হাফেজা হতে পারে.?? যদিও পারে তবুও মেয়েরা হাফেজা হয়ে কি করবে..?? শুধু শুধু কস্ট ও সময় নস্ট। মাযহারুল ইসলাম সাহেব লোকদের কথায় কর্ণপাত করেন নি।বরং তিনি আল্লাহ্ তায়ালার উপর ভরসা করে মেয়েকে হাফেজা বানানোর এক বুক স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। নাজিফাও কারোর কথায় সাহস হারায়নি। নিজেকে দুর্বল ভাবেনি একটুও। পবিত্র কুরআন শরীফ মুখাস্ত করতে শুরু করেছে পুরোদমে। মেধা ভাল হওয়ায় এবং পড়াশুনায় মনযোগী হওয়ায় অল্প কয়েকদিনেই মুখাস্ত করে ফেলেছে তিন (৩) পারা। ঘরে বসে আছেন মাযহার সাহেব। পাশে গিয়ে বসলেন স্ত্রী আমেনা। বললেন, নাজিফাকে তো হাফেজা হওয়ার জন্যে হেফজ্ খানায় ভর্তি করলেন, কিন্তু হেফজ্ খানায় তো বাংলা, অংক, ইংরেজী ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়না, অথচ বর্তমান যুগে চলতে গেলে এসবেরও প্রয়োজন আছে। বিষয়টা ভেবে দেখেন কি?? ভেবেছি প্রচুর চিন্তা করেছি। কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পেরেছেন কি? হ্যা, তবে সেটা বাস্তবায়ন করা বা না করা পুরোটাই নির্ভর করছে নাজিফার উপর। কি সেটা? নাজিফার হেফজ্ পড়া তো বন্ধ করা যাবে না। তবে হেফজ্ পড়ার পাশাপাশি ওকে স্কুলে ভর্তি করতে চাচ্ছিলাম। ও কি একসাথে দুরকম পড়া পড়তে পারবে? তা ছাড়া ক্লাসই বা করবে কিভাবে? তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তবে পরিশ্রম একটু বেশী করতে হবে। সকালে নাস্তা খাওয়ার পর হেফজ্ খানায় ঘুমের ছুটি।

     সে সময়ে না ঘুমিয়ে স্কুলে যেতে হবে এবং দুপুর পর্যন্ত স্কুলের ক্লাস করে জোহর নামাজের পর দুপুরের খাবার খেয়ে মাদ্রাসায় যেতে হবে । নাফিজা ছোট্ট মেয়ে। ও কি পারবে এত কস্ট করতে? এজন্যেই তো বললাম যে, সিদ্ধান্তটা বাস্তবায়ন হওয়া না হওয়া নির্ভর করছে নাজিফার উপর। তবে আমার বিশ্বাস নাজিফা পারবে। কারণ, নাজিফ অন্য সব মেয়েদের মত না। ও সবার চেয়ে আলাদা। ওর জ্ঞান- বুদ্ধি বয়স অনুযায়ী অনেক বেশী। আজকে ওকে জিজ্ঞাসা করে দেখ কি বলে। নাজিফা বাচ্চা মানুষ। ওর কাছে জিজ্ঞেস করার কি আছে? আপনি স্কুলে ভর্তি করে দেন, দেখেন পারে কিনা? তারপরও তুমি জিজ্ঞেস করে দেখো! আচ্ছা মাদ্রাসা থেকে আসার পর জিজ্ঞাসা করবো। জানো নাজিফার মা! নাজিফা যখন ঘরে বসে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে, তখন আমার এতো ভাল লাগে তা আমি ভাষায় প্রকাশ কর‍তে পারবনা। শুধু এতটুকু বলতে পারি - যদি নাজিফা কুরআন পড়া না শিখে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতা হয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পন্ডিতও হয়ে যেত এবং পৃথিবীর সকল ধনভাণ্ডার ও আমাকে এনে দিতো, তবুও আমার কাছে ততটুকু ভালো লাগত না যতটুকু ভাল লাগে কুরআন তেলাওয়াত করলে। আসলেই তো। কুরআন শরীফ হলো আল্লাহ্ পাকের কালাম। পৃথিবীর বুকে এর চেয়ে সম্মানী এবং এর চেয়ে চাল লাগার বস্তু আর কি হতে পারে? তুমি ঠিকই বলেছো। পৃথিবীর বুকে এমন কোন গ্রন্থ নেই যা পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে সাওয়াব হয়। শুধু কুরআন এমন এক গ্রন্থ, যা বুঝে পড়ুক আর না বুঝে পড়ুক প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে সাওয়াব হবেই। এই ব্যাপারে মনে হয় একটি হাদীস আছে। আমি একবার একটি বইয়ে পড়েছিলাম। হ্যা আছে। আপনার কি জানা আছে হাদীসটি? হ্যা জানা আছে। তাহলে একটু বলবেন কি? আমার পুরোপুরি মনে নেই। বলছি তাহলে শোনো- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন - রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফের একটি অক্ষর পাঠ করলো সে ব্যক্তি একটি নেকী লাভ করলো এবং ওই একটি নেকী দশটি নেকীর সমান হবে। (অর্থাৎ একটি অক্ষরে দশটি নেকী পাওয়া যাবে) আমি একথা বলছি না যে, আলিফ লাম মিম একটি অক্ষর, বরং আলিফ একটি অক্ষর লাম একটি অক্ষর এবং মিম একটি অক্ষর [তিরমিযি] আমেনা বেগম যখন মাযহার সাহেবের সাথে নাজিফার পড়াশুনা নিয়ে কথা বলছিলেন তখন -নাজিফা মাদ্রাসা থেকে এলো। নাজিফাকে কাছে ডাকলেন মা-আমেনা বেগম। আদর করে কোলে বসালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন মা -নাজিফা! তোমাকে যদি স্কুলে ভর্তি করানো হয়, তাহলে কি তুমি হেফজ্ পড়া এবং স্কুলের পড়া একসাথে চালাতে পারবে? মায়ের কথা শুনে নাজিফা একটু ভাবলো। এরপর বললো, আমি পারব মা। আমাকে পারতেই হবে।

মেয়ের মুখে আশানুরূপ কথা শুনে আল্লাহ্ তায়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন মা- আমেনা বেগম, সেই সাথে মাযহার সাহেবও। দুদিন পর। নাজিফাকে স্কুলে ভর্তি করা হলো। বাড়িতে বসেই নাজিফা বাবার কাছে থেকে বাংলা, অংক ও ইংরেজি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিয়েছিলো। তাই তাকে ১ম ও ২য় শ্রেনীতে ভর্তি না করে ৩য় শ্রেনীতে ভর্তি করা হলো। মেধা ভাল হওয়ায় নাজিফা স্বাভাবিক ভাবেই দুই পড়া একসাথে চালিয়ে যেতে লাগলো। তেমন কোন বেগ পেতে হলোনা তাকে। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো একটি বছর। নাজিফার বয়স এখন আট। ক্লাস থ্রী থেকে ফোরে উঠেছে নাজিফা। বার্ষিক পরিক্ষায় নম্বর ও পেয়েছে অন্যদের চেয়ে বেশী। তাই স্কুলের শিক্ষকরা নাজিফার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রায়ই তারা অন্য শিক্ষার্থীদের উতসাহ দিতে গিয়ে নাজিফার ব্যাপার টেনে আনেন। বলেন, দেখো এই মেয়েটা হাফেজী পড়ে আবার স্কুলেও পড়ে। তারপরও পড়াশুনায় তোমাদের চেয়ে কত ভালো। আর তোমরা শুধু স্কুলে পড়েও নাজিফার সাথে পেরে ওঠ না। তোমরা কি নাজিফার মত উদ্যোগী ও মনযোগী হতে পারো না? নাজিফা যে শুধু স্কুলে সবার থেকে এগিয়ে তা কিন্তু নয়। মাদ্রাসায়ও সহপাঠীদের চেয়ে ভালো। সবাই যেখানে এক পৃস্টা মুখস্ত করে নাজিফা সেখানে দেড় কিংবা দুই পৃস্টা মুখস্ত করে। ফলে এক বছরেই নাজিফা ১৫-পারা কুরআনের হাফেজা হয়ে গিয়েছে। নাজিফার কন্ঠস্বর যেমন সুন্দর কুরআন তেলাওয়াতও তেমনি আসাধারন। মধুমাখা কন্ঠে নাজিফা যখন কুরআন তেলাওয়াত করে তখন মুগ্ধ হয়ে শুধু শুনতেই মন চায়। নাজিফার হেফজ্ পড়ার কথা শুনেই এলাকায় চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃস্টি হয়েছিলো। এখন নাজিফার সুমধুর তেলাওয়াত পুরো গ্রামে আলোচিত হচ্ছে। যার দূর থেকে নাজিফার কথা শুনে তারা এসে একনজর নাজিফাকে দেখে যায়। শুনতে চায় নাজিফার কন্ঠে একটু সুমধুর তেলাওয়াত। নাজিফা যেহেতু এখন কুরুবুল বুলুগ বা বালেগা হয়নি, তাই কেউ শুনতে চাইলে লক্ষ্মী মেয়ের মতো তেলাওয়াত শুনায় নাজিফা। হামদ, নাত, গজল ও গাইতে পারে নাজিফা। ছোট মেয়ে নাজিফার প্রশংসায় পঞ্চমুখ গ্রামের সবাই। নাজিফাকে এখন সবাই এক নামে চিনে।

 প্রিয় পাঠক, ৪ নম্বর পর্ব আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আপনাদের মাঝে প্রকাশ করবো দোয়া করিবেন, মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে যেন সফলতা দান করেন, এবং আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে দ্বীনের খেদমতে কবুল করেন। আমীন ছুম্মা আমীন --------------------------------------------------------

সিরিজঃ মহীয়সী নারী। পার্ঠ (৩)
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মফীজুল ইসলাম
সংকলনেঃ আমি হাফেজ মুহাম্মাদ জিয়াউর রহমা

No comments

Powered by Blogger.