যিন্দা লাশ। খাটি পীর চেনার উপায়।
যিন্দা লাশ। খাটি পীর চেনার উপায়।
![]() |
| খাটি পীর চেনার উপায়। |
অনেক ‘পীর’ আছেন যারা নিজের দলে লােক ভিড়াবার জন্যে নানা রকম ফন্দি এঁটে থাকেন। এরূপ একজন পীর নিজের পীরত্ব প্রচারের জন্যে এক কৃত্রিম কেরামতির অবতারণা করলেন। তিনি সেজে গুজে এক নতুন রাজ্যে প্রবেশ করলেন। তার শিষ্য’কে কাফনের কাপড় পরিয়ে লাশবাহী খাটে শােয়ালেন। মরা-কান্না কাঁদবার জন্যে কয়েকজন লােক নিযুক্ত করলেন। এরপর জানাযা পড়ার জন্যে লােকজন ডাকা হলাে। বিশাল জনতা যখন জানাযা পড়ার অপেক্ষা করছে তখন পীর সাহেব হঠাৎ করে খাটের কাছে আবির্ভূত হলেন এবং লাশকে লক্ষ্য করে বললেন - (কুম বে- ইনিল্লাহ্) ‘আল্লাহর ইচ্ছায় উঠে দাঁড়াও।
শােনা মাত্রই লাশটি কাফনের কাপড় ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাে এবং হাত তুলে জনতাকে সালাম জানালাে। সরলমনা জনগণ পীরের এই কেরামতি দেখে চারিদিকে ডঙ্কা বাজিয়ে দিল। দূর-দূরান্ত থেকে লােকজন এসে ভীড় করতে লাগলাে। রাজ্যের রাজাও এই নবাগত পীরের কাহিনী শুনতে পেলেন। তিনি ছিলেন খুব বুদ্ধিমান। পীরকে তার দরবারে ডেকে পাঠালেন। পীর সাহেব মনে মনে ভাবলেন তার কৌশলটি বৃথা যায়নি। রাজাও তার ভক্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি খুশীমনে রাজার দরবারে হাজির হলেন । রাজা বললেন, “যুদ্ধে আমার সেনাবাহিনীর অনেক লোেক মারা যায়। ফলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে। কারণ ঐরূপ ট্রেনিং প্রাপ্ত সৈন্য আর পাওয়া যায় না। আপনি এ দেশেই থাকুন। ওদেরকে যিন্দা করাই আপনার কাজ। আপনার ভরণ-পােষণ এবং যাবতীয় খরচ-পত্র আমরা বহন করবাে।” রাজার কথা শুনে পীর সাহেবের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। তিনি দুই চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন এবং সুযােগ বুঝে অতি গােপনে রাতারাতি দেশ ছেড়ে পালালেন। -- আল এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ্ খন্ড ২ পৃষ্ঠা ৫৫।
পাঠক এবার প্রকৃত পীরের সংজ্ঞা জেনে নিন। পীরের ব্যক্তিত্ত্বে নিম্নলিখিত গুণ অবশ্যই থাকতে হবে ? ১। আলেম হতে হবে। আলেমের সংজ্ঞা হলাে - কমপক্ষে তিনটি কেতাব এমনভাবে শিক্ষা করতে হবে যেন তা সুন্দরভাবে ছাত্রদেরকে পড়াতে পারেন এবং ছাত্ররা তার পড়াবার যােগ্যতার পক্ষে স্বাক্ষী দিবে। কেতাব তিনটি হলাে (ক) তফসীরে জালালাইন, (খ) মেশকাত শরীফ এবং (গ) হেদায়া( উভয় খন্ড)। | ২। প্রত্যেক ফরয, ওয়াজেব এবং সুন্নতের পূরাপুরি পাবন্দ থাকবে এবং হারাম ও মকরূহ কাজ সমূহ সম্পূর্ণভাবে বর্জন করবে। ৩। মানুষকে শিক্ষা দানের জন্য অপর এমন একজন পীর কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে যার পর্যায়ক্রমিক পীরের প্রথম পীরটি স্বয়ং রসূলুল্লাহ কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছেন। আর সেই পীরের দরবারে আলেমগণ যান কিনা দেখতে হবে। কারণ পীরের স্থান আলেমের উর্ধে। আলেম হওয়ার পরও দীর্ঘদিন পীরের সান্নিধ্যে থেকে ‘এছলাহ্’ লাভের জন্য সাধনা করতে হয় । এই জন্য আলেমগণও প্রকৃত পীরের দরবারে গিয়ে উপকৃত হন। মুরীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা বা দুনিয়ার কোনরূপ সুযােগ-সুবিধা পাওয়ার ইচ্ছা থাকেনা প্রকৃত পীরের। তিনি ইচ্ছাকৃত কোন কেরামত’ প্রকাশ করেন না। এমনকি যদি অনিচ্ছাকৃত তার থেকে কোন কেরামত প্রকাশ হয়ে যায় তবে তিনি মনে কষ্ট পান। তাঁর মজলিসে বসলে অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগরিত হয়, পরকালের কথা মনে পড়ে যায় এবং অন্তর অনাবিল শান্তিতে ভরে উঠে।
সূত্রঃ যিয়াউল কুলুব ও কছদুস সাবীল





No comments
Post a Comment