ads

বিড়ালের গলায় ঘন্টা।

বিড়ালের গলায় ঘন্টা।


সনাতন’রূপ: একটা বিড়াল ইঁদুর ধরে ধরে খেতাে, তার উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে ইঁদুরেরা একটা সভা ডেকে আলােচনা করতে বসল কেমন করে তাকে শায়েস্তা করা যায়। ইঁদুরেরা নানা রকম প্রস্তাব রাখতে লাগল কিন্তু কোনটাই সবার পছন্দ হয় না। তখন একটা কম বয়সী ইঁদুর দাড়িয়ে বলল, বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দিলে কেমন হয় তাহলে ঘন্টার শব্দ শুনে আমরা আগে থেকে পালিয়ে যেতে পারব। প্রস্তাবটা সবার খুব পছন্দ হল কিন্তু হঠাৎ একটা বুড়াে ইদুর দাঁড়িয়ে বলল, প্রস্তাবটা কাজে লাগাতে পারলে কাজ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু আমার প্রশ্ন হল বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে?

সুবচন: প্রস্তাব করা সহজ কিন্তু তার বাস্তবায়ন তত সহজ নয়।

 আধুনিক রূপ: এক শহরে একটি সন্ত্রাসী বিড়াল থাকত, তার উৎপাতে শহরের সব ইঁদুর অতিষ্ট হয়েছিল। বিড়ালের অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে একদিন সব ইঁদুরেরা একটা সভা ডাকল। সভায় শহরের ছােট বড় সব ইঁদুর এসেছে। সভার শুরুতে একটা ইঁদুর জ্বালাময়ী একটা বক্তৃতা দিয়ে তাদের দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা দিল। সন্ত্রাসী বিড়ালের অত্যাচারে তাদের জীবন কেমন বিষময় হয়ে উঠেছে তার কথা বলতে গিয়ে তার মুখে প্রায় ফেনা উঠে গেল। বক্তৃতা শেষ করে সে সবাইকে আহ্বান করল কেমন করে এই অবস্থার একটা সমাধান করা যায় তার প্রস্তাব দেয়ার জন্য। ইঁদুরেরা নানারকম প্রস্তাব দিতে থাকে, কেউ ভাড়াটে গুণ্ডা লাগিয়ে বিড়ালটাকে গুম খুন করে ফেলার কথা বলে, কেউ থানা পুলিশের কথা বলে, কেউ শহর ছেড়ে চলে যাবার প্রস্তাব দেয় কিন্তু কোন প্রস্তাবই আর কারাে মনে ধরে না। তখন টিংটিংয়ে একটা ইদুর দাঁড়িয়ে বলল, একটা কাজ করলে হয় না? কি কাজ? বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দিলে কেমন হয়? ঘণ্টা? হা। তাহলে যখনই ঘণ্টা বাজবে তখনই বুঝব বদমাইসটা আসছে।

 আর আমরা টাকা পয়সা নিয়ে সরে যাব! মােটাসােটা একটা ইদুর চোখ বড় বড় করে বলল, বুদ্ধিটাতাে খারাপ না! অন্য সবাই মাথা নেড়ে বলল, একেবারে এক নম্বর বুদ্ধি! সবাই যখন টিংটিংয়ে ইঁদুরের বুদ্ধির তারিফ করছিল তখন বুড়ো একটা ইদুর (কলেজের অংকের প্রফেসর) মাথা দুলিয়ে বলল, বুদ্ধিটা তাে সে খারাপ বলে নি, কিন্তু শুধু একটা সমস্যা। সবাই ঘুরে তাকালাে তার দিকে, কি সমস্যা? সন্ত্রাসী বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? ঘরে পিন পতন নিস্তব্ধতা নেমে আসে, সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকায়, কেউ কোন কথা বলে না। কম বয়সী একটা ইঁদুর রিনরিনে গলায় বলল, সত্যিই তাে! ঘন্টাটা বাঁধবে কে? টিংটিংয়ে ইদর গলা খাকারী দিয়ে বলল, আমি বাঁধব। তুমি? হা। তােমরা আমাকে একটা ভাল দেখে ঘণ্টা জোগাড় করে দাও আমি সত্যিই বেঁধে দেব। পরের সপ্তাহে দেখা গেল টিংটিংয়ে ইদুর একটা ঘণ্টা নিয়ে বাজারের মােড়ে বসে আছে। বিড়াল প্রায়ই বিকেল বেলা মােটর সাইকেলে করে এখানে চাঁদা তুলতে আসে। টিংটিংয়ে ইদুর যে ঘণ্টাটি নিয়ে বসে আছে সেটা দেখতে সত্যি চমত্তার, এলাকার সেরা কারিগর এটা যত্ন করে তৈরী করেছে। নিখুত কাজ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, তার উপর সােনা দিয়ে প্লেটিং করে দেয়া হয়েছে কাজেই একেবারে ঝকঝক করছিল।

 কিছুক্ষণের মাঝেই বিড়াল তার মােটর সাইকেল হাকিয়ে বাজারের মােড়ে হাজির হল, ঠিংটিংয়ে ইঁদুরকে দেখে দাঁত মুখ খিচিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই ব্যাটা কি করছিস এখানে? কিছু না। একটা ঘণ্টা তৈরী করতে দিয়েছিলাম, তৈরী শেষ হয়েছে। তাই নিয়ে যাচ্ছি। ঘণ্টা? কিসের ঘণ্টা? গলায় বাঁধার ঘণ্টা। জানেন তাে আজকাল গলায় ঘন্টা বাধা নূতন ফ্যাসন শুরু হয়েছে। বিড়াল জানত না, তাই মুখ শক্ত করে বলল, তাই নাকি? জী। সবাই বাধছে। এটা কে বাঁধবে? আমাদের পাড়ার একটা বিড়াল। যেরকম তার চেহারা সেরকম তার ব্যবহার। পড়াশােনা খেলাধূলা সবকিছুতে ভাল। আমরা সবাই মিলে তার জন্মদিনে এটা উপহার দিচ্ছি। সুন্দর হয়েছে না ঘণ্টাটা? কি সুন্দর শব্দ হয় শুনেন টিংটিংয়ে ইদুর তখন ঘণ্টাটা বাজিয়ে একবার শুনলো। সন্ত্রাসী বিড়াল চোখ লাল করে বলল, ঘণ্টাটা দে-- টিংটিংয়ে ইদুর ভয় পাওয়ার ভাণ করে বলল, কেন, কি করবেন? বিড়াল ধমক দিয়ে বলল, আমার মুখের উপর কথা, দে বলছি! টিংটিংয়ে ইদুর ঘণ্টাটা দেয়ার আগেই বিড়াল ছোঁ মেরে তার হাত থেকে ঘন্টাটা কেড়ে নিয়ে নিজের গলায় বেঁধে ফেলল। তারপর চোখ লাল করে বলা, যা ব্যাটা ভাগ এখান থেকে। কত বড় সাহস আমার এলাকায় থাকে অথচ আমাকে কোন উপহার না দিয়ে সে উপহার দেয় অন্য বিড়ালকে। 

 দুর্বচন: সাধারণত বিড়াল নিজেই গলায় ঘন্টা বাঁধে।

No comments

Powered by Blogger.