ads

শেয়াল ও আঙুর। বাচ্চাদের গল্প।

শেয়াল ও আঙুর।।


সনাতন রূপ: একদিন একটা ক্ষুধার্ত শেয়াল দেখতে পেল গাছের ডাল বেয়ে আঙুরের লতা উপরে উঠে গেছে আর সেখান থেকে থােকা থােকা পাকা আঙুর ঝুলছে। লােভে শেয়ালের জিবে পানি এল, সে লাফিয়ে লাফিয়ে ঐ পাকা আঙুর খাবার চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু কিছুতেই তার নাগাল পেল না। অনেক্ষণ চেষ্টা করেও কিছুতেই আঙুর খেতে না পেরে সে হতাশ হয়ে সেখান থেকে চলে যেতে যেতে নিজের গাম্ভীৰ্য্য ধরে রেখে বলল, আঙুর ফল টক।

 আধুনিক রূপ: একদিন এক শেয়াল অফিস ফেরৎ বাসায় যাচ্ছে। সারাদিনের খাটা খাটুনি ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি বড় সাহেবের গালাগাল সব মিলিয়ে খুব পরিশ্রম হয়েছে। খিদেও যা পেয়েছে সে আর বলার মত নয়। বাড়ীর কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেল একটা গাছ বেয়ে বেয়ে আঙুর লতা উঠে গেছে আর সেখান থেকে ঝুলছে টসটসে পাকা আঙুর, বাজারে তার কে.জি একশ টাকার এক পয়সা কম না! শেয়াল এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল আঙুরের মালিককে দেখা যায় কি না, দেখল আশে পাশে কেউ নেই। তখন সে তার হাতের ব্যাগ, টিফিনের কৌটা আর ছাতাটাকে রাস্তার পাশে রেখে একটা লম্বা লাফ দিল। আঙুরগুলি অনেক উপর থেকে ঝুলছে শেয়াল তার নাগাল পেল না। শেয়াল এবার দৌড়ে এসে আরাে জোরে একটা লাফ দিল কিন্তু তবু কোন লাভ হল আঙুরগুলি তবুও তার নাগালের বাইরে। শেয়াল তবু হাল ছাড়ল না, ঝুলন্ত আঙুরের নীচে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করতে লাগল লাফিয়ে চেষ্টা করতে লাগল, দূর থেকে দৌড়ে এসে চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু কিছুই লাভ হল না। শেষ পর্যন্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে ঘেমে একাকার হয়ে শেয়াল হাল ছেড়ে দিয়ে যখন রাস্তার পাশে থেকে তার ব্যাগ, টিফিনের কৌটা আর ছাতা তুলে নিচ্ছিল তখন সে দেখতে পেল আঙুর গাছের মালিক তার ঘরের জানালা দিয়ে তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। শেয়াল হকচকিয়ে গিয়ে বলল, এই যে ভাই, ভাল আছেন? মালিক কঠিন গলায় বলল, আপনার মতলব খানা কি? অনেকক্ষণ | থেকে লক্ষ্য করছি আমার আঙুর খাওয়ার চেষ্টা করছেন। শেয়াল চোখ কপালে তুলে বলল, আমি? কখন? এই যে দেখলাম লাফিয়ে লাফিয়ে আঙুর ধরার চেষ্টা করছেন। | শেয়াল হা হা করে হেসে বলল, তাই বলেন! আমি আঙুর খাওয়ার জন্যে লাফালাফি করছিলাম না, আমি আসলে ব্যায়াম করছিলাম। ব্যায়াম? হ্যা। শরীরকে ঠিক রাখার জন্যে প্রত্যেকদিন বিকালে আমি লাফাই। | কার্ডিও ভাসকুলার ব্যায়াম। হার্ট বিট দ্বিগুন করে আধা ঘণ্টা ধরে রাখতে হয় এতে হার্টের মাসল শক্ত হয়ে রক্ত প্রবাহ বাড়ে। শরীর শক্ত হয়, ডায়াবেটিস ব্লাড প্রেসার ধারে কাছে আসতে পারে না। ক্ষুধা বাড়ে, হজম শক্তি দ্বিগুন হয়ে যায়। রাত্রে ভাল ঘুম হয়, মন প্রফুল্ল থাকে— মালিক আমতা আমতা করে বলল, আমি ভাবছিলাম বুঝি আমার আঙুর খাবার চেষ্টা করছেন! ধূর! শেয়াল হাত নেড়ে পুরাে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, আঙুর কি একটা খাবার জিনিস হল? ফুড ভ্যালু বলে কিছু নাই শুধু সুগার। আঙুর খাওয়া আর লজেন্স খাওয়ার মাঝে পার্থক্য কি? তা ছাড়া আমি হচ্ছি কার্নিভােরাস। মাংশাষী প্রানী। আমি আঙুর খাব কোন দুঃখে? হা হা হা.

শিক্ষা: আঙুরে কোন ফুড ভ্যালু নেই। নীচু মনের মানুষেরা যেটা নিজে পেতে পারে না তার মাঝেই দোষ খুঁজে পায়।

No comments

Powered by Blogger.