আদর্শ স্ত্রীর বিশেষ গুণ । স্বামীর হৃদয়কে আয়ত্বে নেয়া।
আদর্শ স্ত্রীর বিশেষ গুণ
। স্বামীর হৃদয়কে আয়ত্বে নেয়া।
স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনটা যেহেতু আজীবন পারস্পরিক সুসম্পর্ককে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে রাখার জন্য, তাই একটি বাস্তব সত্য কথা বলতে হয় যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক ও সৌহার্দবােধ যদি পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান থাকে, তাহলে দাম্পত্য সুখ-শান্তিও পূর্ণরূপে হাসিল হতে পারে। এটা ব্যতীত জীবন অসম্পূর্ণ ও দুঃখী বিবেচিত হয় সমাজের নিকট। তাই স্বামীর অন্তর জয় করার পন্থা শিক্ষা করা নারীর অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য; যা ব্যতীত গত্যন্তর নেই ! নারী যতই শিক্ষিতা, সুশ্রী-সুন্দরী, রূপসী ও ধনী হােক না কেন, এ সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন রপ্ত করা ব্যতীত স্বামীর হৃদয়রাজ্যের রাণী হতে পারবে না। | তাই স্বামীকে আপন বানানাের জন্য তত্ত্ব ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কিছু কথা লিপিবদ্ধ করছি। যে সকল নারীরা স্বামীর খিদমত, সেবা-শুশ্রুষা ও মুহাব্বতকে স্বীয় ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে, আর তার পদতলে জীবন বিসর্জন দেয়াকে নিজের সফলতা মনে করে, তাদের জীবনকে শান্তিময়, সুখময় এবং আনন্দময় বানানাের জন্য এ কথাসমূহের উপর আমল করা অপরিহার্য। এসবই স্ত্রীর উপর কর্তব্য, যা স্বামীর হক ও অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
সেগুলাে হচ্ছে-নারী জীবনে মাতা-পিতা ও স্বামীর চেয়ে আপন আর কেউ নেই। তাই স্বামীকে প্রাণের চেয়েও প্রিয়, আপনের চেয়েও আপন মনে করতে হবে। স্বামী যদি গরীবও হন, তবুও তাকে ধনী এবং বিত্তশালী মনে করতে হবে। তাকে প্রাণভরে শ্রদ্ধা-ভক্তি করবে। প্রতিটি কার্জ-কর্ম তার পরামর্শ অনুযায়ী করবে। স্বামী যে কোন কাজ করতে বলবেন, দ্রুত সম্পাদন করে দিবে। তার ইচ্ছা ও মতের বিরােধী কোন কাজ করবে না। সকল কাজে, সকল কথায় তাঁর সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রাখবে। নিজ সন্তুষ্টির উপর তাঁর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিবে। সকল সময় তাঁর সুখ-শান্তির প্রতি লক্ষ্য রাখবে। এমন কোন কথা বলবে না, যা তার মনে ব্যথা দেয়। খুশী হয়ে স্বামী যা কিছু দিবেন, তা আনন্দচিত্তে কবুল করবে। যে কাজ করতে বলবেন, তা খুশী মনে এমনভাবে করবে, যেন তিনি চিন্তামুক্ত হয়ে যান। স্বামীর অল্প আয়ে তুষ্ট থাকবে। অভাব-অনটনের কারণে তাকে তিরস্কার করবে না। তার সম্মুখে মনমরা হয়ে ঘােরাফেরা করবে না। বরং ফুর্তির সাথে চলা-ফেরা করবে। সর্বদা হাসিমাখা চেহারায় নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করবে, যেন তােমাকে দেখে তাঁর হৃদয়টা আনন্দে বাগ-বাগ হয়ে যায় এবং সকল পেরেশানী দূর হয়ে যায়।
স্বীয় প্রয়ােজন সম্পাদনের পূর্বে তার প্রয়ােজন সম্পাদন করবে। তাকে সাধ্যানুযায়ী সুস্বাদু খাদ্য আহার করাবে। পানাহারের পূর্বে নিজে তাঁর হস্ত ধৌত করাবে। স্বামী গরীব হলে তার পরিধেয় বস্ত্র সম্ভব হলে নিজে সেলাই করে দিবে। তার কাজ কর্মে সহযােগিতা করবে। নিজ হাতে তার কাজগুলাে করে দিতে চেষ্টা করবে। চা, পানি, নাস্তা পূর্ব থেকে প্রস্তুত রাখবে। এমন কোন কথা বা কাজ করবে না, যাতে স্বামী পেরেশান হন। তাঁর সাধ্যাতীত কোন কিছুর ফরমায়েশ করবে না। কেননা, যদি তিনি তা আনতে না পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে মনস্তাপে ক্লিষ্ট হবেন। তবে সে জিনিষ নসীবে থাকলে, প্রাপ্ত হবেই। নিজ প্রয়ােজন নিজেই সমাধান করতে চেষ্টা করবে। নিজের কোন কাজের জন্য তাকে আদেশ করবে না। যখন স্বামী গৃহে প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন নাকে নাকে কেঁদে তার সম্মুখে কোন অভিযােগ করবে না। কারণ, জানা তাে নেই, তিনি কেমন মেজাজে বাড়ী ফিরলেন এবং বাইরে তার সাথে কি কি অবস্থা ঘটেছে। স্বামীর পানাহারের প্রাক্কালে এমন আকর্ষণীয় ও মিষ্টিমাখা ভাষায় আলাপচারিতায় লিপ্ত হবে, যেন তিনি শান্তিতে তৃপ্তি সহকারে পানাহার করতে পারেন। কারণ, নীরবে শান্তিতে বসে ডাল-ভাত খাওয়া কোরমাপােলাওর মতই মজাদার লাগে। আর অশান্তি ও অস্থিরতার মধ্যে বিরিয়ানীও বে-মজা ও স্বাদহীন মনে হয়। অভিজ্ঞতা দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, কিছু কিছু বে-ওকুফ, বে-আকল ও বিবেক-বুদ্ধিহীন মহিলা এমনও রয়েছেযারা স্বামী বাড়ীতে প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে সর্ব প্রথম অভিযােগ ও দুঃখের দাস্তান শুনাতে বসে যায়। স্বামীর পানাহার, উঠা-বসা ও বিশ্রামের কথা বেমালুম ভুলে যায়। কষ্টের কাহিনী শুনিয়ে শুনিয়ে তাকে অতিষ্ঠ করে তােলে। অতঃপর স্বামী বেচারা নামকে ওয়াস্তে যৎসামান্য গলধঃকরণ করে উঠে চলে যেতে বাধ্য হয়। স্ত্রীর এহেন রসকষহীন আচরণে স্বামীও অসন্তুষ্ট হয়ে যান। আর মহান আল্লাহ তাআলাও অসন্তুষ্ট হয়ে যান।
যদি আল্লাহ তা'আলা তােমাকে যােগ্যতা ও কর্মক্ষমতা দান করে থাকেন, তাহলে স্বামীর কাজে প্রাণ ভরে সহযােগিতা করবে। তাঁর কাজের বােঝা হালকা করবে। মিষ্টিমাখা ভাষা দ্বারা তার পেরেশানী দূরীভূত করবে। তাঁর দুঃখে দুঃখী হবে, তাঁর সুখে সুখী হবে। যদি তাঁর উপর ঋণের বােঝা থাকে, তাহলে কারিগরী যােগ্যতা বা শিক্ষাগত যােগ্যতার উপার্জন দ্বারা তাঁর ঋণের বােঝা হালকা করতে চেষ্টা করবে। যদি তােমার ব্যক্তি মালিকানায় নগদ অর্থ-কড়ি বা অলংকার সঞ্চিত থাকে, তাহলে ঋণগ্রস্ত স্বামীর নিকট উপস্থিত করে বলবে যে, আপনার ব্যক্তিত্বের তুলনায় এগুলাে আমার নিকট কিছুই নয়। আপনি আছেন, আমার সব কিছুই আছে। এগুলাে আপনি নিজ প্রয়ােজনে খরচ করুন। আপনার দু’আ মাখা ছায়া যেন সর্বদা আমার মাথার উপর থাকে। আল্লাহ তা'আলা ইচ্ছা করলে, এর চেয়ে উত্তম সম্পদ দান করতে পারেন। অন্যথায় সব কিছু বেকার হয়ে যাবে। দরিদ্র হওয়ার কারণে স্বামীর সেবা-যত্ন অবহেলা বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে না। ঘরের কাজ-কর্ম নিজ হাতে করতে অভ্যস্ত হবে। এতে আশা করি, আল্লাহ তা'আলা সুখের দিন উপহার দিবেন। অভাব থাকলে সাংসারিক ব্যয় কম করবে, কৃচ্ছতার পথ অবলম্বন করবে। মাসিক যা কিছু উপার্জন হয়, তা থেকে সামান্য হলেও প্রতিমাসে কিছু কিছু সঞ্চয় করবে। সামান্য মনে করে উড়িয়ে দিবে না।
নিজের পােশাক-পরিচ্ছদ নিজেই সেলাই করার চেষ্টা করবে। খাদ্য-খাবার নিজ হাতে তৈরী করবে। যতদূর সম্ভব বস্তীর বুয়া-মাসী দ্বারা খাদ্য রান্না করাবে না। সন্তানদের প্রতিপালন ও পরিচর্যা নিজেই করতে চেষ্টা করবে। স্বামী যদি কোন কারণ বশতঃ ক্রোধান্বিত হয়ে যান, তাহলেও তুমি ক্রোধান্বিত হবে না, বরং তার পথ অবলম্বন করবে। তার ইচ্ছা ও মর্জি মুতাবিক চলবে। তার চাহিদার উপর সন্তুষ্ট থাকবে। তােমার কাজ-কর্মে, আচার-ব্যবহারে তুষ্ট না হলেও তাঁর হক তুমি আদায় করতে থাকবে। এতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট থাকবেন। তিনি যতটুকু আয় উপার্জন করবেন, তা আমানতদারীর সাথে খরচ করবে। যথেচ্ছা অপব্যয় করবে না। নিজের কষ্ট হলেও তার প্রয়ােজন পূর্ণ করবে। | স্বামীর সাথে এমন অমায়িক ব্যবহার করবে এবং লেন-দেন এমন পরিস্কার রাখবে, যেন আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী শুনলে খুশী হয়। এভাবে নারীরা ইচ্ছা করলে নিজ প্রজ্ঞা, যােগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার পরশে মাটির ঘরকে সােনার চেয়েও খাঁটি বানাতে পারে। আবার তার জ্ঞানহীনতা, নিবুদ্ধিতা ও সুষ্ট ব্যবস্থাপনায় অযােগ্যতার কারণে স্বর্ণকমল রাজপ্রাসাদও গােয়াল ঘরে পরিণত হতে পারে। তাই প্রজ্ঞা, যােগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা নারী জাতির জন্য অমূল্য রত্নরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে এই সুন্দর বসুন্ধরায়। সুতরাং তােমার ভাগ্যাকাশে সৌভাগ্যের নক্ষত্র উদিত করতে তােমার প্রজ্ঞা, যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়ােগ করতে কখনও কৃপণতা করবে না। বরং রুটিন বাঁধা ও নিয়মবদ্ধ জীবন যাপন করতে অভ্যস্থ হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্ঞানবতী ও গুণবতী মেয়েরা কখনাে দুর্ভোগে পড়ে না। তাদের পেরেশানী ও দুঃখ বহন করতে হয় না। অনিয়মতান্ত্রিক ও অনভিজ্ঞ মহিলারই কষ্ট-যাতণায় পতিত হয়। প্রতিনিয়ত তাকে অসংখ্য ধিক্কার ও ভর্ৎসনার সম্মুখীন হতে হয়। কখনাে শান্তি ও নিশ্চিন্তে দু’মুঠো খাওয়াও তার নসীবে জুটতে চায় না। সংসারে কাজ-কর্মের কোন পরিপাট্য, সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও গােছগাছ না থাকার কারণে স্বামী বেচারা সর্বদা পেরেশানীতে কালাতিপাত করতে থাকেন। তার নিকট স্ত্রী ও সংসারধর্ম সব কিছুই বিরক্তিকর মনে হয়।
স্ত্রীর সামান্য ভুল ও অবহেলার কারণে সংসার পরিণত হয় জাহান্নামে। কিন্তু সচেতন, সজাগ ও বুদ্ধিমতী স্ত্রী সর্বদা গৃহকে জান্নাত বানিয়ে রাখে। নিজেও সুখ-শান্তিতে জীবন যাপন করে এবং পরিবারের সকলেই নিশ্চিন্তে ও প্রশান্তিতে কালাতিপাত করে। বরং এমন নারীরা সংসারের সুখ-শান্তির মুল উৎসের ভূমিকা পালন করে। অনেক পুরুষ এমনও রয়েছেযারা নারীর বাহ্যিক রূপ-লাবণ্যের পরিবর্তে তার গুণের পাগল হয়ে থাকে। তাই বাতেনী গুণের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রতিটি নতুন স্ত্রীর কর্তব্য। কারণ, রূপ-লাবণ্য নারীর ক্ষণস্থায়ী সম্পদ। পক্ষান্তরে গুণ ও বুদ্ধিমত্তা তার দীর্ঘস্থায়ী পাথেয়। | সচেতন আদর্শ স্ত্রীরা! তােমরা স্বামীর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর সন্তুষ্টির স্বার্থে নিজের আমিত্ব ও ক্রোধকে বিসর্জন দাও। বড়ত্ব, অহমিকা, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে মােটেও প্রশ্রয় দিবে না। প্রতিবেশী বা পরপুরুষের সহিত আলাপচারিতায় লিপ্ত হবে না। কারাে নিকট স্বামীর দুর্নাম করবে না। স্বামীর বদনাম হয়-এমন একটি শব্দও উচ্চারণ করবে না। তার মনে যার আগ্রহ নেই, তা বিলকুল বর্জন করবে। রাগী স্বামীকেও সেবা-যত্ন ও আদরসােহাগের মাধ্যমে আপন বানাতে চেষ্টা করবে। তার ইচ্ছানুযায়ী চলবে। এমন কাজ করবে, যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তার গােপনীয় বিষয়াদি কারাে নিকট প্রকাশ করবে না। এমন সাজ-গােছ ও রূপচর্চা করবে, যেমনটি তিনি পছন্দ করেন। খারাপ ও দুশ্চরিত্রা নারীদের সংস্রব ত্যাগ করবে। যদি উল্লেখিত দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমল কর, তাহলে তােমার কিসমত আলােকোভাসিত হয়ে নক্ষত্রের মতই জ্বলজ্বল করবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, তােমার স্বামী তােমার অনুগত হয়ে যাবেন। আর সর্বদা তােমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকবেন। অধিকন্তু, তােমাকে নিয়ে অহংকার করে প্রশান্তি লাভ করবেন। তোমাকে প্রেম-ভালবাসার সুখসাগরে ডুবিয়ে রাখবেন।
স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনটা যেহেতু আজীবন পারস্পরিক সুসম্পর্ককে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে রাখার জন্য, তাই একটি বাস্তব সত্য কথা বলতে হয় যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক ও সৌহার্দবােধ যদি পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান থাকে, তাহলে দাম্পত্য সুখ-শান্তিও পূর্ণরূপে হাসিল হতে পারে। এটা ব্যতীত জীবন অসম্পূর্ণ ও দুঃখী বিবেচিত হয় সমাজের নিকট। তাই স্বামীর অন্তর জয় করার পন্থা শিক্ষা করা নারীর অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য; যা ব্যতীত গত্যন্তর নেই ! নারী যতই শিক্ষিতা, সুশ্রী-সুন্দরী, রূপসী ও ধনী হােক না কেন, এ সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন রপ্ত করা ব্যতীত স্বামীর হৃদয়রাজ্যের রাণী হতে পারবে না। | তাই স্বামীকে আপন বানানাের জন্য তত্ত্ব ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কিছু কথা লিপিবদ্ধ করছি। যে সকল নারীরা স্বামীর খিদমত, সেবা-শুশ্রুষা ও মুহাব্বতকে স্বীয় ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে, আর তার পদতলে জীবন বিসর্জন দেয়াকে নিজের সফলতা মনে করে, তাদের জীবনকে শান্তিময়, সুখময় এবং আনন্দময় বানানাের জন্য এ কথাসমূহের উপর আমল করা অপরিহার্য। এসবই স্ত্রীর উপর কর্তব্য, যা স্বামীর হক ও অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
সেগুলাে হচ্ছে-নারী জীবনে মাতা-পিতা ও স্বামীর চেয়ে আপন আর কেউ নেই। তাই স্বামীকে প্রাণের চেয়েও প্রিয়, আপনের চেয়েও আপন মনে করতে হবে। স্বামী যদি গরীবও হন, তবুও তাকে ধনী এবং বিত্তশালী মনে করতে হবে। তাকে প্রাণভরে শ্রদ্ধা-ভক্তি করবে। প্রতিটি কার্জ-কর্ম তার পরামর্শ অনুযায়ী করবে। স্বামী যে কোন কাজ করতে বলবেন, দ্রুত সম্পাদন করে দিবে। তার ইচ্ছা ও মতের বিরােধী কোন কাজ করবে না। সকল কাজে, সকল কথায় তাঁর সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রাখবে। নিজ সন্তুষ্টির উপর তাঁর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিবে। সকল সময় তাঁর সুখ-শান্তির প্রতি লক্ষ্য রাখবে। এমন কোন কথা বলবে না, যা তার মনে ব্যথা দেয়। খুশী হয়ে স্বামী যা কিছু দিবেন, তা আনন্দচিত্তে কবুল করবে। যে কাজ করতে বলবেন, তা খুশী মনে এমনভাবে করবে, যেন তিনি চিন্তামুক্ত হয়ে যান। স্বামীর অল্প আয়ে তুষ্ট থাকবে। অভাব-অনটনের কারণে তাকে তিরস্কার করবে না। তার সম্মুখে মনমরা হয়ে ঘােরাফেরা করবে না। বরং ফুর্তির সাথে চলা-ফেরা করবে। সর্বদা হাসিমাখা চেহারায় নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করবে, যেন তােমাকে দেখে তাঁর হৃদয়টা আনন্দে বাগ-বাগ হয়ে যায় এবং সকল পেরেশানী দূর হয়ে যায়।
স্বীয় প্রয়ােজন সম্পাদনের পূর্বে তার প্রয়ােজন সম্পাদন করবে। তাকে সাধ্যানুযায়ী সুস্বাদু খাদ্য আহার করাবে। পানাহারের পূর্বে নিজে তাঁর হস্ত ধৌত করাবে। স্বামী গরীব হলে তার পরিধেয় বস্ত্র সম্ভব হলে নিজে সেলাই করে দিবে। তার কাজ কর্মে সহযােগিতা করবে। নিজ হাতে তার কাজগুলাে করে দিতে চেষ্টা করবে। চা, পানি, নাস্তা পূর্ব থেকে প্রস্তুত রাখবে। এমন কোন কথা বা কাজ করবে না, যাতে স্বামী পেরেশান হন। তাঁর সাধ্যাতীত কোন কিছুর ফরমায়েশ করবে না। কেননা, যদি তিনি তা আনতে না পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে মনস্তাপে ক্লিষ্ট হবেন। তবে সে জিনিষ নসীবে থাকলে, প্রাপ্ত হবেই। নিজ প্রয়ােজন নিজেই সমাধান করতে চেষ্টা করবে। নিজের কোন কাজের জন্য তাকে আদেশ করবে না। যখন স্বামী গৃহে প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন নাকে নাকে কেঁদে তার সম্মুখে কোন অভিযােগ করবে না। কারণ, জানা তাে নেই, তিনি কেমন মেজাজে বাড়ী ফিরলেন এবং বাইরে তার সাথে কি কি অবস্থা ঘটেছে। স্বামীর পানাহারের প্রাক্কালে এমন আকর্ষণীয় ও মিষ্টিমাখা ভাষায় আলাপচারিতায় লিপ্ত হবে, যেন তিনি শান্তিতে তৃপ্তি সহকারে পানাহার করতে পারেন। কারণ, নীরবে শান্তিতে বসে ডাল-ভাত খাওয়া কোরমাপােলাওর মতই মজাদার লাগে। আর অশান্তি ও অস্থিরতার মধ্যে বিরিয়ানীও বে-মজা ও স্বাদহীন মনে হয়। অভিজ্ঞতা দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, কিছু কিছু বে-ওকুফ, বে-আকল ও বিবেক-বুদ্ধিহীন মহিলা এমনও রয়েছেযারা স্বামী বাড়ীতে প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে সর্ব প্রথম অভিযােগ ও দুঃখের দাস্তান শুনাতে বসে যায়। স্বামীর পানাহার, উঠা-বসা ও বিশ্রামের কথা বেমালুম ভুলে যায়। কষ্টের কাহিনী শুনিয়ে শুনিয়ে তাকে অতিষ্ঠ করে তােলে। অতঃপর স্বামী বেচারা নামকে ওয়াস্তে যৎসামান্য গলধঃকরণ করে উঠে চলে যেতে বাধ্য হয়। স্ত্রীর এহেন রসকষহীন আচরণে স্বামীও অসন্তুষ্ট হয়ে যান। আর মহান আল্লাহ তাআলাও অসন্তুষ্ট হয়ে যান।
যদি আল্লাহ তা'আলা তােমাকে যােগ্যতা ও কর্মক্ষমতা দান করে থাকেন, তাহলে স্বামীর কাজে প্রাণ ভরে সহযােগিতা করবে। তাঁর কাজের বােঝা হালকা করবে। মিষ্টিমাখা ভাষা দ্বারা তার পেরেশানী দূরীভূত করবে। তাঁর দুঃখে দুঃখী হবে, তাঁর সুখে সুখী হবে। যদি তাঁর উপর ঋণের বােঝা থাকে, তাহলে কারিগরী যােগ্যতা বা শিক্ষাগত যােগ্যতার উপার্জন দ্বারা তাঁর ঋণের বােঝা হালকা করতে চেষ্টা করবে। যদি তােমার ব্যক্তি মালিকানায় নগদ অর্থ-কড়ি বা অলংকার সঞ্চিত থাকে, তাহলে ঋণগ্রস্ত স্বামীর নিকট উপস্থিত করে বলবে যে, আপনার ব্যক্তিত্বের তুলনায় এগুলাে আমার নিকট কিছুই নয়। আপনি আছেন, আমার সব কিছুই আছে। এগুলাে আপনি নিজ প্রয়ােজনে খরচ করুন। আপনার দু’আ মাখা ছায়া যেন সর্বদা আমার মাথার উপর থাকে। আল্লাহ তা'আলা ইচ্ছা করলে, এর চেয়ে উত্তম সম্পদ দান করতে পারেন। অন্যথায় সব কিছু বেকার হয়ে যাবে। দরিদ্র হওয়ার কারণে স্বামীর সেবা-যত্ন অবহেলা বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে না। ঘরের কাজ-কর্ম নিজ হাতে করতে অভ্যস্ত হবে। এতে আশা করি, আল্লাহ তা'আলা সুখের দিন উপহার দিবেন। অভাব থাকলে সাংসারিক ব্যয় কম করবে, কৃচ্ছতার পথ অবলম্বন করবে। মাসিক যা কিছু উপার্জন হয়, তা থেকে সামান্য হলেও প্রতিমাসে কিছু কিছু সঞ্চয় করবে। সামান্য মনে করে উড়িয়ে দিবে না।
নিজের পােশাক-পরিচ্ছদ নিজেই সেলাই করার চেষ্টা করবে। খাদ্য-খাবার নিজ হাতে তৈরী করবে। যতদূর সম্ভব বস্তীর বুয়া-মাসী দ্বারা খাদ্য রান্না করাবে না। সন্তানদের প্রতিপালন ও পরিচর্যা নিজেই করতে চেষ্টা করবে। স্বামী যদি কোন কারণ বশতঃ ক্রোধান্বিত হয়ে যান, তাহলেও তুমি ক্রোধান্বিত হবে না, বরং তার পথ অবলম্বন করবে। তার ইচ্ছা ও মর্জি মুতাবিক চলবে। তার চাহিদার উপর সন্তুষ্ট থাকবে। তােমার কাজ-কর্মে, আচার-ব্যবহারে তুষ্ট না হলেও তাঁর হক তুমি আদায় করতে থাকবে। এতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট থাকবেন। তিনি যতটুকু আয় উপার্জন করবেন, তা আমানতদারীর সাথে খরচ করবে। যথেচ্ছা অপব্যয় করবে না। নিজের কষ্ট হলেও তার প্রয়ােজন পূর্ণ করবে। | স্বামীর সাথে এমন অমায়িক ব্যবহার করবে এবং লেন-দেন এমন পরিস্কার রাখবে, যেন আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী শুনলে খুশী হয়। এভাবে নারীরা ইচ্ছা করলে নিজ প্রজ্ঞা, যােগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার পরশে মাটির ঘরকে সােনার চেয়েও খাঁটি বানাতে পারে। আবার তার জ্ঞানহীনতা, নিবুদ্ধিতা ও সুষ্ট ব্যবস্থাপনায় অযােগ্যতার কারণে স্বর্ণকমল রাজপ্রাসাদও গােয়াল ঘরে পরিণত হতে পারে। তাই প্রজ্ঞা, যােগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা নারী জাতির জন্য অমূল্য রত্নরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে এই সুন্দর বসুন্ধরায়। সুতরাং তােমার ভাগ্যাকাশে সৌভাগ্যের নক্ষত্র উদিত করতে তােমার প্রজ্ঞা, যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়ােগ করতে কখনও কৃপণতা করবে না। বরং রুটিন বাঁধা ও নিয়মবদ্ধ জীবন যাপন করতে অভ্যস্থ হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্ঞানবতী ও গুণবতী মেয়েরা কখনাে দুর্ভোগে পড়ে না। তাদের পেরেশানী ও দুঃখ বহন করতে হয় না। অনিয়মতান্ত্রিক ও অনভিজ্ঞ মহিলারই কষ্ট-যাতণায় পতিত হয়। প্রতিনিয়ত তাকে অসংখ্য ধিক্কার ও ভর্ৎসনার সম্মুখীন হতে হয়। কখনাে শান্তি ও নিশ্চিন্তে দু’মুঠো খাওয়াও তার নসীবে জুটতে চায় না। সংসারে কাজ-কর্মের কোন পরিপাট্য, সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও গােছগাছ না থাকার কারণে স্বামী বেচারা সর্বদা পেরেশানীতে কালাতিপাত করতে থাকেন। তার নিকট স্ত্রী ও সংসারধর্ম সব কিছুই বিরক্তিকর মনে হয়।
স্ত্রীর সামান্য ভুল ও অবহেলার কারণে সংসার পরিণত হয় জাহান্নামে। কিন্তু সচেতন, সজাগ ও বুদ্ধিমতী স্ত্রী সর্বদা গৃহকে জান্নাত বানিয়ে রাখে। নিজেও সুখ-শান্তিতে জীবন যাপন করে এবং পরিবারের সকলেই নিশ্চিন্তে ও প্রশান্তিতে কালাতিপাত করে। বরং এমন নারীরা সংসারের সুখ-শান্তির মুল উৎসের ভূমিকা পালন করে। অনেক পুরুষ এমনও রয়েছেযারা নারীর বাহ্যিক রূপ-লাবণ্যের পরিবর্তে তার গুণের পাগল হয়ে থাকে। তাই বাতেনী গুণের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রতিটি নতুন স্ত্রীর কর্তব্য। কারণ, রূপ-লাবণ্য নারীর ক্ষণস্থায়ী সম্পদ। পক্ষান্তরে গুণ ও বুদ্ধিমত্তা তার দীর্ঘস্থায়ী পাথেয়। | সচেতন আদর্শ স্ত্রীরা! তােমরা স্বামীর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর সন্তুষ্টির স্বার্থে নিজের আমিত্ব ও ক্রোধকে বিসর্জন দাও। বড়ত্ব, অহমিকা, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে মােটেও প্রশ্রয় দিবে না। প্রতিবেশী বা পরপুরুষের সহিত আলাপচারিতায় লিপ্ত হবে না। কারাে নিকট স্বামীর দুর্নাম করবে না। স্বামীর বদনাম হয়-এমন একটি শব্দও উচ্চারণ করবে না। তার মনে যার আগ্রহ নেই, তা বিলকুল বর্জন করবে। রাগী স্বামীকেও সেবা-যত্ন ও আদরসােহাগের মাধ্যমে আপন বানাতে চেষ্টা করবে। তার ইচ্ছানুযায়ী চলবে। এমন কাজ করবে, যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তার গােপনীয় বিষয়াদি কারাে নিকট প্রকাশ করবে না। এমন সাজ-গােছ ও রূপচর্চা করবে, যেমনটি তিনি পছন্দ করেন। খারাপ ও দুশ্চরিত্রা নারীদের সংস্রব ত্যাগ করবে। যদি উল্লেখিত দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমল কর, তাহলে তােমার কিসমত আলােকোভাসিত হয়ে নক্ষত্রের মতই জ্বলজ্বল করবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, তােমার স্বামী তােমার অনুগত হয়ে যাবেন। আর সর্বদা তােমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকবেন। অধিকন্তু, তােমাকে নিয়ে অহংকার করে প্রশান্তি লাভ করবেন। তোমাকে প্রেম-ভালবাসার সুখসাগরে ডুবিয়ে রাখবেন।





No comments
Post a Comment