ads

ইসলামিক উপন্যাস - মহিয়সী নারী। পর্ব ১।

মহিয়সী নারী। পর্ব ১।


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

 সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীনের জন্যে, যিনি এই সমস্ত বিশ্বের মালিক, এবং দরুদ ও সালাম সেই মহামানবের উপর যার জন্যে এ সৃস্টিকুলকে আল্লাহ্ তায়ালা সুন্দর ও মনোরম ভাবে সাজিয়েছেন। আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুস্টি অর্জনের লক্ষেই আমি এই বইটি আপনাদের মাঝে প্রকাশ ও প্রচার করার ইচ্ছা পোষণ করছি। দয়াময় মহান আল্লাহ্ তায়ালা যেন আমার চেস্টাকে কবুল করেন এবং আমায় সামনের দিকে আগানোর তাওফিক দান করেন। সবার নিকট দোয়ার দরখাস্ত........। প্রিয় পাঠক, তাহলে এই ইসলামিক উপন্যাসটির ধারাবাহিক পর্ব অনুযায়ী ১-ম পর্বের শুরুর লগ্ন এখানেই করা যাক....

 শীতের সকাল। চারিদিকে ঘন কুয়াশার আবছা অন্ধকার। দূরের জিনিষগুলো খুব একটা নজরে আসছেনা। রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা শুরু হয়নি বললেই চলে। তবে নানা প্রজাতির পাখিরা এগাছ থেকে ওগাছে ছুটাছুটি করছে। এ দিকে দুর্বা ঘাসেরা কুয়াশার বারিতে স্নান করছে । তাদের গায়ে জমে থাকা শিশির কণা সূর্যের মৃদু কিরনে মুক্তার দানার মত ঝলমল করছে। আর রাস্তার দু'পাশে সবুজ ধানক্ষেত পুরো প্রকৃতিকে সবুজ করে রেখেছে। কিন্তু এদিকে নাজিফার কোনো খেয়াল নেই। শীত সবাইকে হার মানাতে পারলেও কোনমতেই নাজিফাকে পারেনি। সে আঁকাবাঁকা মেঠোপথে হেটে চলছে অবিরাম। সম্মুখপ্রানে এগিয়ে যাচ্ছে নিজ গতিতে। ভাবখানা এমন- যেন খুব ব্যস্ত। পূর্ব আকাশে সূর্য বিকশিত হওয়ার পূর্বেই সে পৌছাতে চায় তার গন্তব্যে। ছোট্ট মেয়ে নাজিফা। হাটতে হাটতে হাপিয়ে উঠেছে। তবু তার চেহারায় ক্লান্তির কোন ছাপ নেই। নেই কস্টের কোন চিহ্ন। তার সুন্দর মুখে শোভা পাচ্ছে তৃপ্তির হাসি। নাজিফার পুরো নাম 'নাজিফা তাসনীম আশা' বয়স সাত বছর। বাবা-মা'র একমাত্র সন্তান সে। তাকে ঘিড়েই

তাদের সকল স্বপ্ন, সকল আশা। তাইতো তার নামের শেষ এ আশা শব্দটি যুক্ত করেছেন মা-বাবা। নাজিফার মাতার নাম আমেনা বেগম। তিনি একজন গৃহিনী। সাদা মনের মানুষ। লেখাপড়া তেমন জানেন না। তবে নামাজ রোজার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। নাজিফার পিতা মাযহারুল ইসলাম। তিনি খুব অমায়িক লোক। দ্বীনদারীর দিক দিয়ে গ্রামের সবার চেয়ে এগিয়ে। নিজে আলেম নন, কিন্তু আলেম -ওলামাদের সাথে অনেক বেশী সু সম্পর্ক। ওয়াজ মাহফিলে বেশ যাতায়াত করেন তিনি। তিনি আলেম- ওলামাদের পবিত্র জবানে কুরআন- হাদীসের যে আলোচনায় শুনেন, তা-ই আমল করার চেস্টা করেন। একবার এক আলেমের মুখে শুনেছিলেন যে পথিক ও মুসাফিরদের সেবা করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। একথা শুনার পর তিনি তার বাড়ির সামনে রাস্তার পার্শ্বে একটি বিশ্রামাগার বানিয়ে দিয়েছেন। যেন এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্লান্ত পথিকরা এখানে বসে আরাম করতে পারেন। আমেনা বেগম ও মাযহার সাহেবের মনের লালিত স্বপ্ন- তাদের আদরের একমাত্র কন্যা নাজিফাকে পবিত্র কুরআন শরীফের হাফেজা বানাবেন। মাযহার সাহেব একবার এক মাওলানা সাহেবের মুখে শুনেছিলেন- হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়ে এবং তদানুযায়ী আমল করে, তাকে কিয়ামতের দিন নূরের তৈরী একটি তাজ পরানো হবে এবং তার পিতা-মাতাকে দুটি নূরের তাজ পরানো হবে। তখন তার পিতা-মাতা বলবে, হে আল্লাহ্ এই তাজ কিসের বিদলে..?? তখন আল্লাহ্ তায়ালা বলবেন- তোমাদের ছেলে-মেয়ে কুরআন শরীফ পড়ার বিনিময়ে। কেউ যদি নিজের সন্তানকে কুরআন শরীফ নজরানা পড়ায় তাহলে তার অগ্র-পশ্চাতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি নিজের সন্তানকে হেফজ্ পড়াবে (হাফেজ -হাফেজা বানাবে) কিয়ামতের দিন তাকে চতুর্দশীর পূর্ব চন্দ্রের সমতুল্য করে উঠানো হবে এবং তার সন্তানকে বলা হবে, তুমি পড়তে থাক। সন্তান যখন একটি করে আয়াত পড়বে, তখন পিতা-মাতার একটি করে দরজা (মর্যাদা) বুলন্দ (উঁচু) হবে। [ফাযায়েলে কুরআন পৃসঠাঃ ৩৬] মাযহার সাহেব মাওলানা সাহেবের মুখে যেদিন একথা শুনেছেন, সেদিনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- তার আদরেদ কন্যা নাজিফা তাসনীম আশাকে কুরআনের হাফেজা বানাবেন। সেই লক্ষে নাজিফাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করছেন তিনি। বাড়ির আশেপাশে কোন মহিলা মাদ্রাসা না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়ে নাজিফাকে ভর্তি করতে হয়েছে ছেলেদের মাদ্রাসায়। নাজিফা বয়সে ছোট হওয়ায় এবং পড়াশুনার প্রতি তার অদম্য স্পৃহা থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষকগণ নাজিফাকে ভর্তি করতে দ্বিমত পোষণ করেননি। অন্যথায় ছেলেদের হেফজ্ খানায় মেয়েদের ভর্তি হওয়ার ইতিহাস বিরল।


 নাজিফা প্রতিদিন বাড়ি থেকে আশা যাওয়া করে পড়াশুনা করে। যদিও হেফজ্খানার শিক্ষার্থীদের রাত-দিন সর্বদা মাদ্রাসায় থাকতে হয়। তথাপি নাজিফা মেয়ে বলে তাকে মাদ্রাসায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়নি। সে প্রতিদিন পায়ে হেটে মাদ্রাসায় যাওয়া আশা করে। মাদ্রাসা যে বাড়ি থেকে খুব কাছে তা কিন্তু নয়, বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব প্রায় দেড় মাইল। হেফজ্ বিভাগের পড়া শুরু হয় ভোররাত থেকেই। তাই নাজিফাকে খুব ভোরেই ছুটতে হয় মাদ্রাসার অভিমুখে। যে সময় নাজিফার সমবয়সী ছেলে-মেয়েরা থাকে গভীর নিদ্রায় অচেতন। সে সময় নাজিফা ঘুমের মায়া ত্যাগ করে হাফেজা হওয়ার স্বপ্ন রিদয়ে ধারন করে একা একা হেটে চলে মাদ্রাসার পানে। প্রতিদিনের মত আজও মাদ্রাসায় যাচ্ছে নাজিফা। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মা আমেনা নাজিফাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, এই কাকডাকা ভোরে একা একা মাদ্রাসায় যেতে ভয় করেনা তোমার..?? উত্তরে নাজিফা বলেছিলো, কিসের ভয় মা!! আমি তো একা নই। আল্লাহ্ তায়ালা আমার সাথে রয়েছেন। তুমিই না বলেছো, সবসময় আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওতায়ালাকে স্বরন করতে...?? ছোট্ট মুখে এমন চমৎকার জবাব শুনে বিস্মিত হন মা আমেনা। সেইসাথে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মহান আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে। আর নাজিফাকে কোলে তুলে চুমু খান মাতৃস্নেহে। নাজিফা হেটে চলছে আনমনে। ৩০-মিনিট পর। কুয়াশা কেটে গিয়েছে অনেকটা। এখন সূর্যের আলোতে সবকিছুই স্পস্ট দেখা যাচ্ছে। নাজিফা মাদ্রাসার কাছাকাছি এসে পড়েছে। এমন সময় ওর শিক্ষক মুহাম্মাদ সাদেক সাহেব জানালার ফাক দিয়ে দেখলেন নাজিফা আসছে। তিনি তাড়াতাড়ি নাজিফার কাছে গেলেন এবং হাত ধরে আদরমাখা কন্ঠে বললেন ইস, হাত পা কেমন বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। মেয়েটা পড়ার জন্যে কত কস্ট করে। নাজিফা একটি ছোট্ট মেয়ে হওয়া সত্বেও পড়ার জন্যে এত ত্যাগ স্বীকার করে। তাই মাদ্রাসার শিক্ষকগণ নাজিকাফে খুব স্নেহ করেন এবং ওর প্রতি গুরুত্ব বাড়ান। যেন কুরুবুল বুলুগ বা বালেগা হওয়ার কাছাকাছি সময়ে পৌছার পূর্বেই নাজিফা হেফজ্ শেষ করতে পারে।

প্রিয় পাঠক ২-য় পর্ব আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আপনাদের মাঝে প্রকাশ করবো দোয়া করিবেন, যেন আমি সফল হই, এবং আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে দ্বীনের খেদমতে কবুল করেন।
আমীন ছুম্মা আমীন -----------------------------------------------------------

সিরিজঃ মহীয়সী নারী। পার্ঠ (১)
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মফীজুল ইসলাম
সংকলনেঃ আমি হাফেজ মুহাম্মাদ জিয়াউর রহমান

No comments

Powered by Blogger.