মিথ্যা, সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার ইত্যাদি পাপের শাস্তি।
মিথ্যা, সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার ইত্যাদি পাপের শাস্তি।
হযরত রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, প্রত্যহ ফজরের নামায শেষে ছাহাবীদের দিকে মুখ করিয়া বসিতেন এবং কেহ কোন খাব (স্বপ্ন) দেখিয়াছে কি না, বা কাহারও কোন কথা বলিবার আছে কি না, জিজ্ঞাসা করিতেন। কোন কথা জানিতে চাহিলে হুযুর (দঃ) তাহাকে যথাযথ উপদেশ প্রদান করিতেন। অভ্যাস মত এক দিন হযরত (দঃ) বলিলেন, কাহারও কিছু বলিবার আছে কি না? কেহ কিছু বলায় তিনি নিজেই বলিলেন, আজ রাত্রে আমি অতি সুন্দর ও বিস্ময়কর একটি স্বপ্ন দেখিয়াছি। (নবীদের খাব এবং ওহী সম্পূর্ণ সত্য হইয়া থাকে। ইহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।) দেখিলাম, দুই ব্যক্তি আমার নিকট আসিয়া আমাকে হাতে ধরিয়া এক পবিত্র স্থানের দিকে লইয়া চলিল। কিয়দ্র গমনের পর দেখিলাম, (১) একজন লােক বসিয়া আছে, আর একজন লোেক তাহার নিকট দন্ডায়মান রহিয়াছে। দন্ডায়মান লােকটির হাতে একটি জম্বুরা রহিয়াছে। সে ঐ জম্বুরা দ্বারা উপবিষ্ট লােকটির মস্তক চিরিতেছে। একবার মুখের এক দিক দিয়া ঐ জম্বুরা ঢুকাইয়া দিয়া মাথার পিছন পর্যন্ত কাটিয়া ফেলে। আবার অন্য দিক দিয়াও এইরূপ করে। এক দিক কাটিয়া যখন অন্য দিক কাটিতে যায়, তখন প্রথম দিক পুনরায় জোড়া লাগিয়া ভাল হইয়া যায়। আবার ঐরূপভাবে কাটে আবার জোড়া লাগে।
আমি এই অবস্থা দেখিয়া অত্যন্ত ভীত হইয়া সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, বন্ধুগণ! ব্যাপার কি? সঙ্গীদ্বয় বলিলেন, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে চলিলাম। কিছুদূর গিয়া দেখিলাম, (২) এক জন লােক শুইয়া আছে, আর একজন লােক একখানা ভারী পাথর হাতে করিয়া তাহার নিকট দণ্ডায়মান রহিয়াছে। দাড়ান লােকটি ঐ পাথরের আঘাতে শােয়া লােকটির মাথা চুরচুর করিয়া দিতেছে। পাথরটি এত জোরে নিক্ষেপ করে যে, মস্তকটি চূর্ণ-বিচুর্ণ হইয়া বহুদূরে গিয়া নিক্ষিপ্ত হয়। লােকটি নিক্ষিপ্ত পাথরটি কুড়াইয়া আনিবার পূর্বেই বহুধা বিভক্ত মস্তক জোড়া লাগিয়া পূর্বের ন্যায় হইয়া যায়। সে ঐ পাথর কুড়াইয়া আনিয়া আবার মাথায় আঘাত করে এবং মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যায়। এইভাবে সে পুনঃ পুনঃ করিতে থাকে। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখিয়া আমি ভীত ও সন্ত্রস্ত হইয়া পড়িলাম। সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, এ কি ব্যাপার খুলিয়া বলুন। তাহারা কোন জবাব না দিয়া শুধু বলিলেন, আগে চলুন। আমরা আগে চলিলাম, কিছুদূর অগ্রসর হইয়া একটি প্রকাণ্ড গর্ত দেখিতে পাইলাম। গর্তটির মুখ সরু, কিন্তু অভ্যন্তরভাগ অত্যন্ত গভীর এবং প্রশস্ত—যেন একটি তন্দুর, উহার ভিতরে দাউ দাউ করিয়া আগুন জ্বলিতেছে আর বহু সংখ্যক নর-নারী উহাতে দগ্ধীভূত হইতেছে। আগুনের তেজ এত অধিক যে, যেন আগুনের ঢেউ খেলিতেছে। ঢেউয়ের সঙ্গে যখন আগুন উচ্চ হইয়া উঠে, তখন লােকগুলি উথলিয়া গর্তের দ্বারেদেশে পৌঁছিয়া গর্ত হইতে বাহির হইবার উপক্রম হইয়া যায়। আবার যখন আগুন নীচে নামিয়া যায়, তখন লােকগুলিও সঙ্গে সঙ্গে নীচে নামিয়া যায়। আমি ভীত হইয়া সঙ্গীগণকে বলিলাম, বন্ধুগণ ! এবার বলুন এই ব্যাপার কি ? কোন জবাব না দিয়াই তাহারা বলিলেন, আগে চলুন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হইতে লাগিলাম। কিছুদূর অগ্রসর হইয়া আমরা একটি রক্তের নদী দেখিতে পাইলাম। তীরে একটি লােক দাঁড়ান আছে, ইহার নিকট পীকৃত কতকগুলি প্রস্তর রহিয়াছে। নদীর মধ্যে একটি লােক হাবুডুবু খাইয়া অতি কষ্টে কূলের দিকে আসিতে চেষ্টা করিতেছে। তীরের নিকটবর্তী হইতেই তীরস্থ লােকটি তাহার মুখে এত জোরে পাথর নিক্ষেপ করে যে, সে আবার নদীর মাঝখানে চলিয়া যায়। এভাবে যখনই সে তীরের দিকে আসিতে চেষ্টা করে, তখনই তীরস্থ লােকটি পাথর নিক্ষেপ করিয়া তাহাকে দূরে সরাইয়া দেয়। এমন নির্মম ব্যবহার দর্শনে ভয়ে আমি স্তম্ভিত হইয়া সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, বন্ধুগণ ! বলুন একি ব্যাপার ? তাহারা কোন জবাব দিলেন না; বলিলেন, আগে চলুন।
আমরা আগে চলিলাম, কিছুদূর অগ্রসর হইয়া একটি সুন্দর শ্যামল উদ্যান দেখিতে পাইলাম। উদ্যানের মধ্যভাগে একটি অতি উচ্চ বৃক্ষ। উহার নিম্নে একজন বৃদ্ধলােক বসা আছে। বৃদ্ধের পার্শ্বদেশে অনেক বালক বালিকা। বৃক্ষটির অপর পার্শ্বে আরও একজন লােক বসা অছে। তাহার সম্মুখে আগুন জ্বলিতেছে। ঐ লোেকটি আগুনের মাত্রা আরও প্রবলভাবে বৃদ্ধি করিতেছে। সঙ্গীদ্বয় আমাকে বৃক্ষে আরােহণ করাইতে লাগিলেন। বৃক্ষটির মাঝামাঝি গিয়া দেখিলাম, এক সুদৃশ্য অট্টালিকা। এমন সুন্দর ও মনােরম অট্টালিকা ইহার পূর্বে কখনও আমি দেখি নাই। অট্টালিকার ভিতরে পুরুষ-স্ত্রী, বালক-বালিকা সকল শ্রেণীর লােক রহিয়াছে। অট্টালিকা হইতে বাহিরে আসিয়া সঙ্গীদ্বয় আমাকে আরও উপরে লইয়া গেলেন। তথায় অপর একটি উত্তম অট্টালিকা দেখিতে পাইলাম, উহার ভিতরে দেখিলাম শুধু বৃদ্ধ ও যুবক। আমি সঙ্গীদ্বয়কে বলিলাম, আপনারা আমাকে নানাস্থান ভ্রমণ করাইয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া আনিলেন। এখন বলুন দেখি, ঐসব কি ব্যাপার দেখিলাম ? সঙ্গীদ্বয় বলিলেন—
১। প্রথম যে লােকটির মস্তক ছেদন করা হইতেছে দেখিয়াছেন, সে লােকটির মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। সে যে মিথ্যা বলিত তাহা দুনিয়াময় মশহুর হইয়া যাইত। ২। দ্বিতীয় নম্বর যে লােকটির মস্তক প্রস্তরাঘাতে চূর্ণ-বিচুর্ণ করা হইতেছিল, সে দুনিয়ায় আলেম ছিল। কোরআন হাদীস শিক্ষা করিয়াছিল, কিন্তু তদনুযায়ী নিজেও আমল করে নাই, অন্যকেও শিক্ষা দেয় নাই, যাহাতে এলমে দ্বীন প্রচার হইতে পারিত। রাত্রে শুইয়া আরামে কাটাইত। আ’লমে বরযখে হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাহার এইরূপ আযাব হইতে থাকিবে। ৩। তৃতীয় নম্বরে আপনি যাহাদের আগুনের তন্দুরের ভিতরে দেখিয়াছেন, তাহারা দুনিয়ায় ছিল ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারী। কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের এইরূপ আযাব হইতে থাকিবে। ১ | ৪। চতুর্থ নম্বরে আপনি যে লােকটিকে রক্তের নদীতে হাবুডুবু খাইতে দেখিয়াছেন, সে ঘুষ, সুদ খাইয়া, চুরি করিয়া, এতীমের ও বিধবার মাল আত্মসাৎ করিয়া লােকের রক্ত শােষণ করিয়াছিল। কিয়ামত পর্যন্ত তাহার এইরূপ আযাব হইতে থাকিবে। ৫। (১) তৎপর বৃক্ষের নীচে যে বৃদ্ধ লােকটিকে দেখিয়াছেন, তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। ছেলেপেলেগুলি মুসলমান নাবালেক ছেলেমেয়ে। আর (২) যিনি অগ্নি প্রজ্বলিত করিতেছিলেন তিনি দোযখের দারােগা মালেক ফিরিস্তা। বৃক্ষের উপর (৩) প্রথম যে অট্টালিকাটি দেখিয়াছেন উহা সাধারণ ঈমানদারদের বেহেশতের বাড়ীঘর। তৎপর (৪) দ্বিতীয় যে অট্টালিকাটি দেখিয়াছেন, উহা ঐ শহীদানের অট্টালিকা, যাহারা দুনিয়াতে দ্বীন ইসলামের জন্য শহীদ হইয়াছেন। আমি জিব্রায়ীল ফেরেস্তা এবং আমার সঙ্গের লােকটি মীকাঈল ফিরিস্তা। (ইহার পর জিব্রায়ীল (আঃ) হযরত (দঃ)-কে বলিলেন] আপনি এখন উপরের দিকে দৃকপাত করুন। আমি উপরের দিকে তাকাইয়া এক খণ্ড সাদা মেঘের মত দেখিলাম। জিব্রায়ীল (আঃ) বলিলেন, উহা আপনার অট্টালিকা। বলিলাম, আমাকে ছাড়িয়া দিন, আমি আমার অট্টালিকায় চলিয়া যাই। জিব্রায়ীল (আঃ) বলিলেন ঃ এখনও সময় হয় নাই, এখনও দুনিয়ায় আপনার হায়াত বাকী আছে। দুনিয়ার জীবন শেষ হইলে পর তথায় যাইবেন। উপদেশঃ এই হাদীস হইতে কয়েকটি বিষয়ের অবস্থা বুঝাইতেছে। প্রথমতঃ মিথ্যার কি ভয়াবহ সাজা। দ্বিতীয়তঃ বে-আমল আলেমের পরিণতি। তৃতীয়তঃ, যিনার প্রতিফল ও চতুর্থতঃ, সুদখােরের ভীষণ আষাব। আল্লাহ্ সকল মুসলমানকে এই সকল কাজ হইতে বাচাইয়া রাখুন। আমীন।
হযরত রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, প্রত্যহ ফজরের নামায শেষে ছাহাবীদের দিকে মুখ করিয়া বসিতেন এবং কেহ কোন খাব (স্বপ্ন) দেখিয়াছে কি না, বা কাহারও কোন কথা বলিবার আছে কি না, জিজ্ঞাসা করিতেন। কোন কথা জানিতে চাহিলে হুযুর (দঃ) তাহাকে যথাযথ উপদেশ প্রদান করিতেন। অভ্যাস মত এক দিন হযরত (দঃ) বলিলেন, কাহারও কিছু বলিবার আছে কি না? কেহ কিছু বলায় তিনি নিজেই বলিলেন, আজ রাত্রে আমি অতি সুন্দর ও বিস্ময়কর একটি স্বপ্ন দেখিয়াছি। (নবীদের খাব এবং ওহী সম্পূর্ণ সত্য হইয়া থাকে। ইহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই।) দেখিলাম, দুই ব্যক্তি আমার নিকট আসিয়া আমাকে হাতে ধরিয়া এক পবিত্র স্থানের দিকে লইয়া চলিল। কিয়দ্র গমনের পর দেখিলাম, (১) একজন লােক বসিয়া আছে, আর একজন লোেক তাহার নিকট দন্ডায়মান রহিয়াছে। দন্ডায়মান লােকটির হাতে একটি জম্বুরা রহিয়াছে। সে ঐ জম্বুরা দ্বারা উপবিষ্ট লােকটির মস্তক চিরিতেছে। একবার মুখের এক দিক দিয়া ঐ জম্বুরা ঢুকাইয়া দিয়া মাথার পিছন পর্যন্ত কাটিয়া ফেলে। আবার অন্য দিক দিয়াও এইরূপ করে। এক দিক কাটিয়া যখন অন্য দিক কাটিতে যায়, তখন প্রথম দিক পুনরায় জোড়া লাগিয়া ভাল হইয়া যায়। আবার ঐরূপভাবে কাটে আবার জোড়া লাগে।
আমি এই অবস্থা দেখিয়া অত্যন্ত ভীত হইয়া সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, বন্ধুগণ! ব্যাপার কি? সঙ্গীদ্বয় বলিলেন, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে চলিলাম। কিছুদূর গিয়া দেখিলাম, (২) এক জন লােক শুইয়া আছে, আর একজন লােক একখানা ভারী পাথর হাতে করিয়া তাহার নিকট দণ্ডায়মান রহিয়াছে। দাড়ান লােকটি ঐ পাথরের আঘাতে শােয়া লােকটির মাথা চুরচুর করিয়া দিতেছে। পাথরটি এত জোরে নিক্ষেপ করে যে, মস্তকটি চূর্ণ-বিচুর্ণ হইয়া বহুদূরে গিয়া নিক্ষিপ্ত হয়। লােকটি নিক্ষিপ্ত পাথরটি কুড়াইয়া আনিবার পূর্বেই বহুধা বিভক্ত মস্তক জোড়া লাগিয়া পূর্বের ন্যায় হইয়া যায়। সে ঐ পাথর কুড়াইয়া আনিয়া আবার মাথায় আঘাত করে এবং মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যায়। এইভাবে সে পুনঃ পুনঃ করিতে থাকে। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখিয়া আমি ভীত ও সন্ত্রস্ত হইয়া পড়িলাম। সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, এ কি ব্যাপার খুলিয়া বলুন। তাহারা কোন জবাব না দিয়া শুধু বলিলেন, আগে চলুন। আমরা আগে চলিলাম, কিছুদূর অগ্রসর হইয়া একটি প্রকাণ্ড গর্ত দেখিতে পাইলাম। গর্তটির মুখ সরু, কিন্তু অভ্যন্তরভাগ অত্যন্ত গভীর এবং প্রশস্ত—যেন একটি তন্দুর, উহার ভিতরে দাউ দাউ করিয়া আগুন জ্বলিতেছে আর বহু সংখ্যক নর-নারী উহাতে দগ্ধীভূত হইতেছে। আগুনের তেজ এত অধিক যে, যেন আগুনের ঢেউ খেলিতেছে। ঢেউয়ের সঙ্গে যখন আগুন উচ্চ হইয়া উঠে, তখন লােকগুলি উথলিয়া গর্তের দ্বারেদেশে পৌঁছিয়া গর্ত হইতে বাহির হইবার উপক্রম হইয়া যায়। আবার যখন আগুন নীচে নামিয়া যায়, তখন লােকগুলিও সঙ্গে সঙ্গে নীচে নামিয়া যায়। আমি ভীত হইয়া সঙ্গীগণকে বলিলাম, বন্ধুগণ ! এবার বলুন এই ব্যাপার কি ? কোন জবাব না দিয়াই তাহারা বলিলেন, আগে চলুন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হইতে লাগিলাম। কিছুদূর অগ্রসর হইয়া আমরা একটি রক্তের নদী দেখিতে পাইলাম। তীরে একটি লােক দাঁড়ান আছে, ইহার নিকট পীকৃত কতকগুলি প্রস্তর রহিয়াছে। নদীর মধ্যে একটি লােক হাবুডুবু খাইয়া অতি কষ্টে কূলের দিকে আসিতে চেষ্টা করিতেছে। তীরের নিকটবর্তী হইতেই তীরস্থ লােকটি তাহার মুখে এত জোরে পাথর নিক্ষেপ করে যে, সে আবার নদীর মাঝখানে চলিয়া যায়। এভাবে যখনই সে তীরের দিকে আসিতে চেষ্টা করে, তখনই তীরস্থ লােকটি পাথর নিক্ষেপ করিয়া তাহাকে দূরে সরাইয়া দেয়। এমন নির্মম ব্যবহার দর্শনে ভয়ে আমি স্তম্ভিত হইয়া সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করিলাম, বন্ধুগণ ! বলুন একি ব্যাপার ? তাহারা কোন জবাব দিলেন না; বলিলেন, আগে চলুন।
আমরা আগে চলিলাম, কিছুদূর অগ্রসর হইয়া একটি সুন্দর শ্যামল উদ্যান দেখিতে পাইলাম। উদ্যানের মধ্যভাগে একটি অতি উচ্চ বৃক্ষ। উহার নিম্নে একজন বৃদ্ধলােক বসা আছে। বৃদ্ধের পার্শ্বদেশে অনেক বালক বালিকা। বৃক্ষটির অপর পার্শ্বে আরও একজন লােক বসা অছে। তাহার সম্মুখে আগুন জ্বলিতেছে। ঐ লোেকটি আগুনের মাত্রা আরও প্রবলভাবে বৃদ্ধি করিতেছে। সঙ্গীদ্বয় আমাকে বৃক্ষে আরােহণ করাইতে লাগিলেন। বৃক্ষটির মাঝামাঝি গিয়া দেখিলাম, এক সুদৃশ্য অট্টালিকা। এমন সুন্দর ও মনােরম অট্টালিকা ইহার পূর্বে কখনও আমি দেখি নাই। অট্টালিকার ভিতরে পুরুষ-স্ত্রী, বালক-বালিকা সকল শ্রেণীর লােক রহিয়াছে। অট্টালিকা হইতে বাহিরে আসিয়া সঙ্গীদ্বয় আমাকে আরও উপরে লইয়া গেলেন। তথায় অপর একটি উত্তম অট্টালিকা দেখিতে পাইলাম, উহার ভিতরে দেখিলাম শুধু বৃদ্ধ ও যুবক। আমি সঙ্গীদ্বয়কে বলিলাম, আপনারা আমাকে নানাস্থান ভ্রমণ করাইয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া আনিলেন। এখন বলুন দেখি, ঐসব কি ব্যাপার দেখিলাম ? সঙ্গীদ্বয় বলিলেন—
১। প্রথম যে লােকটির মস্তক ছেদন করা হইতেছে দেখিয়াছেন, সে লােকটির মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। সে যে মিথ্যা বলিত তাহা দুনিয়াময় মশহুর হইয়া যাইত। ২। দ্বিতীয় নম্বর যে লােকটির মস্তক প্রস্তরাঘাতে চূর্ণ-বিচুর্ণ করা হইতেছিল, সে দুনিয়ায় আলেম ছিল। কোরআন হাদীস শিক্ষা করিয়াছিল, কিন্তু তদনুযায়ী নিজেও আমল করে নাই, অন্যকেও শিক্ষা দেয় নাই, যাহাতে এলমে দ্বীন প্রচার হইতে পারিত। রাত্রে শুইয়া আরামে কাটাইত। আ’লমে বরযখে হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাহার এইরূপ আযাব হইতে থাকিবে। ৩। তৃতীয় নম্বরে আপনি যাহাদের আগুনের তন্দুরের ভিতরে দেখিয়াছেন, তাহারা দুনিয়ায় ছিল ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারী। কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের এইরূপ আযাব হইতে থাকিবে। ১ | ৪। চতুর্থ নম্বরে আপনি যে লােকটিকে রক্তের নদীতে হাবুডুবু খাইতে দেখিয়াছেন, সে ঘুষ, সুদ খাইয়া, চুরি করিয়া, এতীমের ও বিধবার মাল আত্মসাৎ করিয়া লােকের রক্ত শােষণ করিয়াছিল। কিয়ামত পর্যন্ত তাহার এইরূপ আযাব হইতে থাকিবে। ৫। (১) তৎপর বৃক্ষের নীচে যে বৃদ্ধ লােকটিকে দেখিয়াছেন, তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। ছেলেপেলেগুলি মুসলমান নাবালেক ছেলেমেয়ে। আর (২) যিনি অগ্নি প্রজ্বলিত করিতেছিলেন তিনি দোযখের দারােগা মালেক ফিরিস্তা। বৃক্ষের উপর (৩) প্রথম যে অট্টালিকাটি দেখিয়াছেন উহা সাধারণ ঈমানদারদের বেহেশতের বাড়ীঘর। তৎপর (৪) দ্বিতীয় যে অট্টালিকাটি দেখিয়াছেন, উহা ঐ শহীদানের অট্টালিকা, যাহারা দুনিয়াতে দ্বীন ইসলামের জন্য শহীদ হইয়াছেন। আমি জিব্রায়ীল ফেরেস্তা এবং আমার সঙ্গের লােকটি মীকাঈল ফিরিস্তা। (ইহার পর জিব্রায়ীল (আঃ) হযরত (দঃ)-কে বলিলেন] আপনি এখন উপরের দিকে দৃকপাত করুন। আমি উপরের দিকে তাকাইয়া এক খণ্ড সাদা মেঘের মত দেখিলাম। জিব্রায়ীল (আঃ) বলিলেন, উহা আপনার অট্টালিকা। বলিলাম, আমাকে ছাড়িয়া দিন, আমি আমার অট্টালিকায় চলিয়া যাই। জিব্রায়ীল (আঃ) বলিলেন ঃ এখনও সময় হয় নাই, এখনও দুনিয়ায় আপনার হায়াত বাকী আছে। দুনিয়ার জীবন শেষ হইলে পর তথায় যাইবেন। উপদেশঃ এই হাদীস হইতে কয়েকটি বিষয়ের অবস্থা বুঝাইতেছে। প্রথমতঃ মিথ্যার কি ভয়াবহ সাজা। দ্বিতীয়তঃ বে-আমল আলেমের পরিণতি। তৃতীয়তঃ, যিনার প্রতিফল ও চতুর্থতঃ, সুদখােরের ভীষণ আষাব। আল্লাহ্ সকল মুসলমানকে এই সকল কাজ হইতে বাচাইয়া রাখুন। আমীন।





No comments
Post a Comment